Md Salim: দ্বিমুখী নয় বাংলায় লড়াই এবার ত্রিমুখী, অতিমারি প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়েছে বামেদের

Md. Salim ডাক দিলেন সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একসঙ্গে আসার

বাংলার ভোটে এবার তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ কে? এক কথায় বিজেপিকে তৃণমূলের মূল চ্যালেঞ্জার হিসেবে দেখা হলেও বাম-কংগ্রেস জোট অনেক হিসেব উলটে দেবে, দাবি সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিমের। 

ইংরেজি দৈনিক দ্য ইকনমিক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেলিম দাবি করলেন, রাজ্যের ২৩ জেলার অন্তত ৭ টিতে জোটের সঙ্গে সরাসরি লড়াই বিজেপি অথবা তৃণমূলের। সিপিএমের পলিটবুরো সদস্যের দাবি, করোনা অতিমারি বাংলায় বামেদের ফের প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। 

বাম-কংগ্রেস জোটকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পার্টি তৃণমূলকে বাদ দিয়ে বিজেপি বিরোধী বৃহত্তর জোট গড়ার চেষ্টা করছে। 

২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকে বামেদের নির্বাচনী রক্তক্ষরণ অব্যাহত ২০১৯ এর লোকসভা ভোটেও। কিন্তু করোনা অতিমারি সামগ্রিক পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। সেই বদলের উপর ভর করে বামেরা ফের বাংলায় প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেয়েছে বলে মনে করেন মহম্মদ সেলিম। 

তিনি বলছেন, জনমানসে ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ প্রশমন করতে আমাদের ১০ বছর সময় লেগেছে। কতটা পরিবর্তন হয়েছে তা বুঝতে গেলে আপনাকে যেতে হবে কোনও মফস্বলে। সেলিম বলেন, আজ বাংলার মানুষ বলছেন তৃণমূল আমলে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক হিংসার ক্ষেত্রে। বিধানসভা ভোট শুধু মাত্র হিন্দু-মুসলিম বা বাঙালি-অবাঙালি ইস্যুতে লড়া হবে না। মনে রাখতে হবে অতিমারির জেরে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন মানুষের মনে উদয় হতে শুরু করে দিয়েছে। 

সাক্ষাৎকারকে ৭ ভাগে ভাগ করে আসুন জেনে নেওয়া যাক কী বললেন মহম্মদ সেলিম। 

কী হবে বিধানসভা ভোটে? 

সেলিমের মতে বাংলায় প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কারণেই তৃণমূলের পক্ষে তৃতীয়বার জেতা সম্ভব হবে না। আবার এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যা তাতে বিজেপির পক্ষে একা বাংলা জয় অসম্ভব।  অর্থাৎ বাংলায় এবার ত্রিমুখী লড়াই। অতিমারির সময় বামেদের কাজকর্ম আমাকে আশাবাদী করে তুলছে। 

সেলিম বলেন, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে তৃণমূল বা বিজেপির ভোট বৃদ্ধি পাবে না, ভোট ভাগাভাগি ঠেকাতে আমরা চাই সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো আমাদের সঙ্গে আসুক। 

 

AIMIM কত বড়ো ফ্যাক্টর? 

বাংলায় কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। ভুলে গেলে চলবে না বাংলার মুসলিম সমাজ দুটো পার্টিশনের সাক্ষী। তারা ধর্মনিরপেক্ষ দলকেই সমর্থন করবেন। সেলিম বলেন, তাই সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোকে আমাদের সঙ্গে আসতে আহবান জানাচ্ছি। মিমকে ত্যাগ করে আমাদের সঙ্গে আসুন। 

 

CAA-NRC 

CAA-NRC নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল যে একই পথের পথিক তা মানুষের কাছে পরিষ্কার। সিপিএম নেতার মতে, দিল্লি বা মহারাষ্ট্রে যেভাবে প্রতিবাদী বা সমাজকর্মীদের রাষ্ট্রীয় হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে একই পরিস্থিতি বাংলাতেও। 

 

বামেদের নিয়ে আশাবাদী কেন? 

সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলছেন, আমাদের প্রজন্ম একটি মহামারির মুখোমুখি। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন সত্ত্বেও যেভাবে ছাত্র-যুবরা পথে নেমেছেন। যেভাবে শ্রমজীবী ক্যান্টিনের মাধ্যমে অভুক্তদের দু’বেলা খাবার তুলে দিয়েছেন, প্রান্তিক শিশুদের অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বা নিজের মোবাইল থেকে আটকে পড়া মানুষদের বাড়িতে কথা বলানোর উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন তা কিন্তু মানুষ নিজের চোখে দেখেছেন। 

এই প্রসঙ্গেই সেলিম টেনে এনেছেন ১৯৪৩-৪৪ সালের কথা। সেই সময় বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলন গতি পেয়েছিল তার কারণ জাপানি আগ্রাসন উপেক্ষা করে খাদ্য সংকটের মধ্যে এবং বন্যার পর ত্রাণ নিয়ে যেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে গেছিলেন বামপন্থীরা, মানুষ তার প্রতিদান দিয়েছিলেন ব্যালট বাক্সে। এবারও কি একই চিত্র দেখা যাচ্ছে না? প্রশ্ন মহম্মদ সেলিমের।

 

ভরসা ছাত্র-যুব 

মহম্মদ সেলিম বলছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল বা কেন্দ্রের শাসক বিজেপির থেকেও বেশি যুব কর্মী বামেদের সঙ্গে। একে পরিবর্তন বলবেন না? ছাত্র-যুবরা আরও বেশি সংখ্যায় বামপন্থীদের সঙ্গে আসছেন তার কারণ একটাই, পথে নেমে কাজ করার সুযোগ এবং মানুষের পাশে নিঃস্বার্থ ভাবে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আজও বামপন্থীদের বিকল্প নেই। 

 

লোকসভায় ভরাডুবির কারণ কী? 

সেলিম জানাচ্ছেন, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি বালাকোট ইস্যুকে এমনভাবে সামনে এনেছিল যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। মানুষ ভাবলেন এই ভোট আসলে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার হাতিয়ার। সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের দাবি মানুষ বামেদের বিরুদ্ধে ভোট দেননি বরং দিয়েছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আমরা সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছু পরিবর্তন এনেছি, জানিয়েছেন সেলিম। 

 

বাংলায় বিজেপিকে আনল কে? 

মহম্মদ সেলিমের দাবি, মমতা ব্যানার্জি বিজেপি ও আরএসএসকে বাংলায় ডেকে এনেছেন। অথচ ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও আরএসএস ও মুসলিম লিগকে বাংলায় ঢুকতে দেইনি। তাই হিন্দু বা মুসলিম মৌলবাদীদের প্রধান শত্রু বামপন্থীরা। মমতা ব্যানার্জি তাৎক্ষনিক রাজনৈতিক লাভের আশায় ওদের জায়গা দিলেন। দাবি মহম্মদ সেলিমের। তাঁর অভিযোগ মমতা ব্যানার্জি নিজের লাভের জন্য কখনও হিন্দি আবার কখনও মুসলিম মৌলবাদী শক্তিকে মদত জুগিয়েছেন।

Comments are closed.