অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এমআইটির অধ্যাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, এস্থার ডুফলো এবং হার্ভার্ডের মাইকেল ক্রেমার। সোমবার এই খবর পাওয়ার পরই হইচই পড়ে যায় ঐতিহ্যবাহী ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে। তড়িঘড়ি ডাকা হয় সাংবাদিক বৈঠক। শুরু হয়ে যায় দুই কৃতীকে সম্মান জানানোর প্রস্তুতি। ঘটনাচক্রে, অভিজিৎ এবং এস্থার দুজনে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, স্থানীয় সময় দুপুর সওয়া ৩ টে নাগাদ এমআইটির প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয় সম্মাননা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান। হলে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। সাংবাদিকদের পাশাপাশি সেখানে হাজির বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া থেকে গবেষক, শিক্ষকরা। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নোবেলজয়ীদের কথা শোনার জন্য। প্রথমেই দু’জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেলজয়ী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় মিনিট দুয়েক টানা হাততালি চলার পর, ফের মুখ খুলতে পারলেন এমআইটির মুখপাত্র কিম্বার্লে অ্যালেন। আর মুখ খুলেই তিনি সাবধান করে দিলেন উপস্থিত সমস্ত সাংবাদিককে। বললেন, খেয়াল রাখবেন, ওঁদের যেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী বলে উল্লেখ করা না হয়। বরং এস্থার ডুফলো এবং তাঁর স্বামী বলা যেতে পারে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস অবশ্য কিম্বার্লে অ্যালেনের এই দাবি কতটা মানা হবে তা নিয়ে রসিকতার সুরে প্রশ্ন তুলেছে। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, শ্যাম্পেনের গ্লাসে উল্লাস করতে গিয়ে ঠিক কী নামে তাঁদের ডাকা হবে, তা নিয়ে এমআইটিরও সংশয় রয়েছে।
সংশয় যে রয়েছে তা বুঝতে অবশ্য বস্টন যেতে হল না। অর্থনীতিতে আরেক বাঙালির নোবেল প্রাপ্তির খবর দিতে গিয়ে কিম্বার্লে বর্ণিত সাবধানবাণীর কথা বেমালুম ভুলে গেল সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ইকনমিক টাইমস। সেখানে এই সংক্রান্ত খবরের হেডলাইন করা হয়, অর্থনীতিতে নোবেল জিতলেন এমআইটির অধ্যাপক ভারতীয়-আমেরিকান অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী। একইভাবে আরও কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও সোমবার দুপুর থেকে উল্লেখ করা হয়, নোবেল পেয়েছেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী। এস্থার ডুফলো যে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী হিসেবে নন, অর্থনীতিবিদ হিসেবেই নোবেল পেয়েছেন, তাও উল্লিখিত হয়নি অনেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেই।
ইংরেজি দৈনিক দ্য ইকনমিক টাইমস-এর এই হেডলাইন দেখে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক বরখা দত্ত। নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে বরখা দত্ত লিখেছেন, এই হেডলাইন মোটেও ঠিক নয়। অভিজিতের স্ত্রী হিসেবে এস্থার নোবেল পাননি। এবং তাঁর একটি নামও আছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দম্পতি হিসেবে তাঁরা নোবেল জিতলেও, কেউ কারও স্বামী কিংবা স্ত্রী হওয়ার দৌলতে নোবেল পেয়ে গেলেন, এমনটা মনে করা ভুল হবে। পাশাপাশি, এমআইটিতে দাঁড়িয়ে এস্থার নোবেল পাওয়ার পর বলেছেন, আরও বেশি মহিলা উৎসাহিত হোক অর্থনীতি নিয়ে কাজ করতে, আর আরও বেশি পুরুষ তাঁদের সেই সম্মান দিক, যা প্রতিটি মানুষের প্রাপ্য।
Comments are closed.