মামলায় টাকা খরচ না করে তা কর্মীদের জন্য ব্যয় করলে ভাল ফল হোত, পঞ্চায়েতে সিপিএমের ব্যর্থতা নিয়ে বিস্ফোরক মইনুল হাসান।
পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএমের বিপর্যয় নিয়ে মূল্যায়ন করতে গিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে ইতিমধ্যেই নিশানা করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। এবার thebangalstory.com এ মুখ খুললেন লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান। এ’বছর দলের সদস্য পদও রিনিউ করাননি মইনুল। পঞ্চায়েত ভোটের পর্যালোচনায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ভুল রাজনৈতিক লাইন এবং কৌশলকেই দায়ী করলেন তিনি।
মইনুল হাসান
প্রশ্নঃ পঞ্চায়েত ভোটে এই যে সিপিএমের ভরাডুবি, নির্দলের থেকেও কম আসন পাওয়া, তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। রাজ্য কমিটির মিটিংয়েও কাটা-ছেঁড়া হয়েছে। আপনি এত বছর এই দল করেছেন। কেন এমন হাল হল সিপিএমের?
মইনুল হাসানঃ এর অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমত, সাধারণভাবে ভোটের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত ছিল। সমস্ত রাজনৈতিক দলই এর জন্য কম-বেশি দায়ী। তৃণমূল-সিপিএম দ’দলেরই লোক খুন হয়েছেন। তবে সারা রাজ্যে সমানভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ ছিল, এটা আমার কখনও মনে হয়নি। বিরোধীরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রার্থী দিতে পেরেছে। বরং আমার মনে হয়েছে, সিপিএম নির্বাচনের মাঝপথেই যেন ঠিক করে ফেলেছিল, তারা ভোটে লড়বে না। না হলে, আদালতের রায়ে নির্বাচন যখন পিছিয়ে গেল, সিপিএম নেতারা কেন ভোট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন না? দেখে মনে হচ্ছিল, সিপিএম যেন চাইছে আদালতে মামলা করে প্রচারের আলোয় থাকতে। ভোটের আগে নেতারা পার্টি কংগ্রেস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আর কয়েকজন নেতা হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলেন। তাঁদের দেখে মনে হল, নির্বাচনটা বোধয় আদালতেই হবে। কিন্তু মাঠে-ঘাটে সংগঠন কোথায়? নির্বাচন করার নেতা কোথায়? নেতারা তো পার্টি কংগ্রেস আর আদালতেই ব্যস্ত থাকলেন। নিচুতলার কর্মীরাও বুঝে গেলেন, প্রার্থী হতে গিয়ে ঘর ভাঙলে, মামলা হলে নেতাদের পাশে পাওয়া যাবে না।
আমি তো বলব, পার্টি যত টাকা মামলা করতে খরচ করেছে, সেই টাকা যদি তৃণমূলের হাত থেকে কর্মীদের রক্ষার করার জন্য খরচ করা হোত তবে বেশি লাভ হোত। গত পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম নির্ভর করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওপর। তাকিয়ে ছিল মীরা পাণ্ডের দিকে, আর এবার তাকিয়ে ছিল আদালতের দিকে। এটা সম্পুর্ণ ভুল স্ট্র্যাটেজি। নির্বাচন কমিশন বা হাইকোর্টের ভরসায় ভোটে জেতা যায় না।
দ্বিতীয়ত, পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে গ্রামীণ এলাকায়। গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তাঁদের মধ্যে সিপিএম বা বামফ্রন্টের এখন কোনও অস্তিস্বই নেই। তবে ১০০ শতাংশ আসনে সিপিএম প্রার্থী পাবে কোথা থেকে? মালদহ, মুর্শিদাবাদে মুসলমান অনেক বেশি। সেখানে তাও কিছু জায়গায় প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও বিজেপি ভাল রেজাল্ট করেছে। বাকি রাজ্যে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় সিপিএমের কোনও লোকও নেই, সংগঠনও নেই। তাই প্রার্থীও নেই। এর সঙ্গে সন্ত্রাসের কোনও সম্পর্ক নেই।
আর তিন নম্বর বড় কারণ হচ্ছে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ভুল রাজনৈতিক লাইন। এখন রাজ্যে যা পরিস্থিতি, ‘তৃণমূলকে হারাও, বিজেপিকে ঠেকাও’ দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না। রাজ্য তো দেশের বাইরে নয়। এই লাইনের জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হচ্ছে। তাই রাজ্য নেতারা যাই বলুন না কেন, এই লাইনের জন্যই নিচুতলার নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিয়েছেন। নদীয়াতে তো এক রাজ্য কমিটির সদস্য নিজেই এই কাজ করেছেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা যে যাই বলুন, নদীয়া জেলা সিপিএম সুচারুভাবে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করেছে। সেই কারণেই হয়তো এই জেলার সম্পাদককে (সুমিত দে) পুরস্কার হিসেবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান দিয়েছেন রাজ্য নেতারা।