পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনা নেই, দেশে প্রতি ৩ টি ছোট ব্যবসার একটি বন্ধের মুখে, সমীক্ষায় উঠে এল ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা
করোনাভাইরাস অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। গত দু’মাস ধরেই এই গুঞ্জন চলছে। কিন্তু এতদিন প্রামাণ্য তথ্য পরিসংখ্যান তেমন ছিল না। এবার অল ইন্ডিয়া ম্যানুফ্যাকচারার্স অর্গানাইজেশন বা AIMO এর সমীক্ষায় উঠে এল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান। সেখানে বলা হচ্ছে ৩৫ শতাংশ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবসা এবং ৩৭ শতাংশ স্বনির্ভর কারবারে স্থায়ীভাবে তালা মেরে দিতে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। কারণ তাঁরা পুনরুজ্জীবনের কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না। এর অর্থ হল, প্রতি ৩ টির মধ্যে একটি ছোট ব্যবসায় স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মনে রাখা দরকার, ভারতের জিডিপির একটি বিরাট অংশ সরাসরি নির্ভরশীল এমএসএমই সেক্টরের উপর।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে সরকারি প্যাকেজ এমএসএমই ক্ষেত্রের বেশিরভাগ অংশে পৌঁছয়নি। এবং যেখানে পৌঁছেছে তাও চূড়ান্ত অপর্যাপ্ত। সমীক্ষকরা বলছেন, করোনা পর্ব এবং তারপর গণ হারে কারবার ধ্বংসের ঘটনা নজিরবিহীন।
AIMO-এর সমীক্ষায় অনলাইনে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প অর্থাৎ এমএসএমই ক্ষেত্র, কর্পোরেট হাউসের সিইও, কর্মী এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী মিলিয়ে ৪৬ হাজার ৫২৫ জনের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়। সমীক্ষার রিপোর্ট মোট ৩ টি ভাগে প্রকাশ করবে AIMO। সোমবার প্রকাশ হয়েছে প্রথম কিস্তি।
২৪ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চলা এই সমীক্ষায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রের ৩৫ শতাংশ এবং ৩৭ শতাংশ স্বনির্ভর শিল্পোদ্যোক্তা জানাচ্ছেন, ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও উপায় তাঁরা দেখছেন না, তাই ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া রাস্তা নেই।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া এমএসএমই ক্ষেত্রের ৩২ শতাংশ জানিয়েছেন, আগের অবস্থায় ফিরতে বছর ঘুরে যাবে। আর মাত্র ১২ শতাংশ আশাবাদী যে তিন মাসের মধ্যেই ব্যবসার হাল ফিরবে।
ভারতে সাড়ে ৬ কোটি এমএসএমই আছে। তাতে কাজ করেন ১৫ কোটিরও বেশি মানুষ। এছাড়া দেশে ১৩ কোটির বেশি স্বনির্ভর ব্যবসায়ী আছেন। দেশের মোট উৎপাদনের ৪৫ শতাংশ জোগায় এমএসএমই এবং ৪০ শতাংশ রফতানি করে। দেশের জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ আসে এমএসএমইর উপর নির্ভরশীল, করোনা পরিস্থিতিতে তারাই বিপর্যস্ত।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া কর্পোরেটদের মধ্যে এখনও আশার আলো খানিকটা হলেও জ্বলছে। লকডাউনে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু ৪৬ শতাংশ মনে করছেন স্বাভাবিকতা ফিরতে অন্তত ৩ মাস সময় লাগবে। ২৬ শতাংশ মনে করেন ঘুরে দাঁড়াতে ৬ মাস অন্তত সময় লাগবেই। কিন্তু কর্পোরেটে সমস্যা অন্যত্র। সমীক্ষা বলছে, কর্পোরেটে তালা পড়ার সম্ভাবনা কম কিন্তু ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা বিশাল। AIMO এর সাধারণ সম্পাদক কেনেডি রামানন্দ বলছেন, এমএসএমইতে তালা পড়ার ভ্রূকুটি, তেমনই কর্পোরেটে চোখ রাঙাচ্ছে বিপুল ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা। ফলে সামগ্রিকভাবেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মাত্র ৬ শতাংশ কর্পোরেট এবং ১১ শতাংশ স্বনির্ভর ব্যবসায়ী বলছেন, তাঁরা ‘লকডাউন প্রুফ’। কারণ তাদের জরুরি পরিষেবা বা নিত্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা নিয়ে কাজ। ফলে লকডাউনেও তাঁদের ব্যবসা অটুট ছিল। কিন্তু অর্থনীতি যদি লাগাতার চাহিদার অভাবে ভোগে, তাহলে তাঁদেরও কি নিশ্চিন্ত থাকার উপায় আছে? প্রশ্ন কেনেডি রামানন্দের।
AIMO-এর প্রেসিডেন্ট কে ই রঘুনাথনের কথায়, করোনা পরিস্থিতির বহু আগে থেকেই বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প। গত তিন বছরে নোটবন্দি, জিএসটি নীতির প্রভাব তো ছিলই, কিন্তু অতিমারি করোনার জেরে যে অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা রীতিমতো উদ্বেগের। ঋণভার বাড়তে থাকা বহু ছোট ও মাঝারি শিল্পের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছে করোনাভাইরাস, মন্তব্য রঘুনাথনের। AIMO-এর প্রেসিডেন্টের দাবি, স্বাধীনতার পর এমন অবস্থা এই প্রথম।
চার দফা লকডাউন পেরিয়ে ভারত ধাপে ধাপে তা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এদিকে মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু, দিল্লির মতো রাজ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বাড়ছে। যার ফলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি শুরু করা কঠিনতর হয়ে পড়েছে। গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে জিডিপির হার। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াও পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ঋণাত্মক হতে পারে বৃদ্ধির হার। তবে এমএসএমই ক্ষেত্রকে উজ্জীবিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে এই ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত লক্ষ লক্ষ মানুষ।
Comments are closed.