রাজধানী দিল্লিতে জারি হল জাতীয় নিরাপত্তা আইন বা ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (National Security Act)। আপাতত ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই আইন রাজধানীতে জারি থাকবে। এই আইন জারি করার কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা।
এনআরসি, সিএএ, এনপিআর নিয়ে দেশজুড়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন ছড়িয়েছে তার অন্যতম কেন্দ্র দিল্লি। এই আন্দোলনের জেরে তীব্র অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। অভিযোগ উঠছে, আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে পুলিশ এবং নিজেদের দলের গুন্ডাবাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে সরকার এবং বিজেপি।
এর মাঝেই সামনে এল নয়া তথ্য। তিন মাসের জন্য দিল্লিতে কার্যকর করা হচ্ছে পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদানকারী ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (জাতীয় নিরাপত্তা আইন)। জানা গিয়েছে, ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এই বিশেষ নিয়ম। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ গত ১৩ জানুয়ারি এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করে। শুক্রবার রাতে এই নির্দেশিকায় (National Security Act) সম্মতি দিয়েছেন দিল্লির উপ-রাজ্যপাল।
এই বিশেষ আইন চালু হওয়ার ফলে জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে (National Security Act) পুলিশ স্রেফ সন্দেহের বশে যে কোনও ব্যক্তিকে আটক করতে পারবে এবং আটকের পর কোনও রকম চার্জ ছাড়াই ১২ মাস পর্যন্ত তাকে নিজেদের হেফাজতে রেখে দিতে পারে। এমনকি আটক করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রথম দশ দিন, তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা না-ও জানাতে পারে পুলিশ। দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছে, তিন মাস অন্তর এমন নির্দেশিকা দিতে হয়।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ধারায় আটক ব্যক্তিকে ছাড়া পাওয়ার জন্য সরাসরি হাইকোর্টে আবেদন করতে হবে। কিন্তু তাঁকে কোনও আইনজীবী দিয়ে সাহায্য করা হবে না। প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক রাখার সময়সীমা।
এই আইন বলেই জামা মসজিদ চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ভিম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদকে, অসমে একইভাবে গ্রেফতার হন অখিল গগৈ। মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিৎ শূরের মতে, এই ভয়ঙ্কর কালা কানুন সংবিধান প্রদত্ত মানুষের মৌলিক অধিকারকে অগ্রাহ্য করছে। সাম্প্রতিক গণ আন্দোলন দেখে ভয় পেয়ে এমন আইন সাধারণ মানুষের উপর নামিয়ে আনছে মোদী সরকার। তা রুখতে অবিলম্বে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট হয়ে পথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন রঞ্জিৎ শূর। তাঁর দাবি, ভারতের সাংবিধানিক ধারনার পরিপন্থী এই আইন।
শুধু মানবাধিকার কর্মীরাই নন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষই বিষয়টি জানতে পেরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টিকে জরুরি অবস্থার সঙ্গে তুলনা করছেন বিরোধী ও প্রতিবাদীরা। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, মানুষ যেভাবে পথে নামছে তাকে আটকাতে অবশেষে বাধ্য হয়ে এই চরম পদক্ষেপ করল সরকার। এর ফলে যে কোনও বিক্ষোভকারীকে দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক বা দেশবিরোধী তকমা দিয়ে আটক করে রাখতে পারবে পুলিশ।
যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ এই বিষয়টিকে রুটিন নির্দেশ বলেই জানাচ্ছে। উল্লেখ্য, ইন্দিরা গান্ধীর জমানায় ১৯৮০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তৈরি করা হয়েছিল এই বিশের পুলিশ অ্যাক্ট। এর আওতায় যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশ প্রধানকে।
Comments are closed.