১৪ জুলাই থেকে ১৮ দিন কলকাতায় খালি চোখে দেখা যাবে বিরল ধূমকেতু নিওওয়াইজ, আবার তা আসবে সাড়ে ৬ হাজার বছর পর
বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছে কলকাতাসহ গোটা ভারত। ১৪ জুলাই, মঙ্গলবার থেকে আকাশে দেখা যাবে ‘নিওওয়াইজ’ নামে এক রূপসী ধূমকেতুর আগুনের ছটা। এই আগুনে ধূমকেতুর রূপ এতটাই উজ্জ্বল যে টেলিস্কোপ ছাড়া খালি চোখে নজর কাড়বে এটি। জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহলে এই আগুনে ধূমকেতুর আরেক নাম সি/২০২০এফ৩। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে আবার সাড়ে ৬ হাজার বছর পর আসবে এই ধূমকেতু।
ভারতে কবে দেখা যাবে এই ধূমকেতু?
জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই থেকে রাতের আকাশে উজ্জ্বলভাবে দেখা যাবে এই ধুমকেতুর উপস্থিতি। উত্তর-পশ্চিম আকাশে চোখ রাখলে চোখে পড়বে নিওওয়াইজ ধূমকেতুর আলোর ছটা। ১৪ জুলাই থেকে টানা ১৮ দিন সূর্যাস্তের পরপরই প্রায় এক ঘণ্টা করে আকাশের উত্তর-পশ্চিম দিকে দেখা যাবে এই ধূমকেতুকে।
তবে শহরের আলো, দূষণ ও বর্ষার মেঘের আনাগোনার ফলে ধূমকেতুটিকে ততটা উজ্জ্বলভাবে কলকাতার আকাশে যদি নাও দেখা যায়, শহরতলি ও গ্রামাঞ্চলে তাকে বেশ ভালোভাবেই দেখতে পাওয়া যাবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে কবে আসবে নিওওয়াইজ?
বিরল এই ধূমকেতু পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে আগামী ২২ থেকে ২৩ জুলাই। সূর্যাস্তের ২০ মিনিট বাদেই আকাশের উত্তর-পশ্চিমে এই ধূমকেতুকে দেখা যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।
খালি চোখে দেখা যাবে এই ধূমকেতু?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, খালি চোখেই এই ধূমকেতুর উজ্জ্বল উপস্থিতি চাক্ষুষ করতে পারবেন সবাই। তাই বিরল এই দৃশ্য মিস করবেন না। কারণ এই শতাব্দীতে আর কোনও ধূমকেতুকে এর আগে এত উজ্জ্বলভাবে দেখার সুযোগ মেলেনি আমাদের। আগামী ২২ জুলাই এই ধূমকেতুর সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব থাকবে ৬৪ মিলিয়ন মাইল।
কেন ধূমকেতুর নাম নিওওয়াইজ?
গত ২৭ মার্চ এই মহাশূন্যে এই আগন্তুকের দিকে প্রথম নজর পড়ে নাসার উপগ্রহ ‘নিওওয়াইজ’এর। তাই আবিষ্কারের পর সেই নামেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সি/২০২০এফ৩।
৩০ জুলাই নিওওয়াইজ থাকবে সপ্তর্ষিমণ্ডলের নীচে
জানা যাচ্ছে, ধূমকেতুটিকে সবচেয়ে বেশিক্ষণ ধরে দেখা যাবে আগামী ৩০ জুলাই। সপ্তর্ষিমণ্ডলের ঠিক নীচে। ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় থাকবে এর উপস্থিতি। জুলাই মাস হয়ে গেলে আর এই ধূমকেতুটিকে খালি চোখে দেখতে পাওয়া যাবে না। তবে বাইনোকুলার দিয়ে দেখতে পাওয়া যাবে তখন।
নিওওয়াইজ ধূমকেতুর সৌন্দর্য
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বছর পর নিওওয়াইজ এসেছে সৌরমণ্ডলের শেষ প্রান্তে থাকা ফুটবলের মতো বরফের পুরু আস্তরণ ‘ওরট্ ক্লাউড’ থেকে। কিন্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এলে ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসের ধুলোবালি জমা পুরু বরফ গলতে শুরু করে সূর্যের তাপে। তখন সেই বরফকণা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে থাকে মহাকাশে। তার ফলেই একটা লেজ বা ‘কামেট্স টেল’ তৈরি হয় ধূমকেতুর। সেটাই আমাদের নজর কাড়ে। বিস্মিত করে দেয় সেই সৌন্দর্য। আবার সাড়ে ৬ হাজার বছর পর দেখা মিলবে নিওওয়াইজ ধূমকেতুর।
এর আগে যে ধূমকেতুরা সবার নজরে পড়েছিল
এর আগেও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এসেছে একাধিক ধূমকেতু। তাদের অনেকে আমাদের নজরে পড়েছে, অনেকে পড়েনি। তবে বেশিরভাগ ধূমকেতুকে দেখতে টেলিস্কোপের উপর ভরসা রাখতে হয়েছে। ১৯৬৫ সালে টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখা গিয়েছিল ‘ইকেয়া সাকি’ ধূমকেতুটিকে। তার পর ১৯৮৬ সালে খালি চোখে দেখা গিয়েছিল ‘হ্যালির ধূমকেতু’। তার আবার এক দশক পর ১৯৯৬ সালে টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখা গিয়েছিল ধূমকেতু ‘হায়াকাতু’কে। তারও ১১ বছর পর ১৯৯৭ সালে খালি চোখে দেখা যায় ‘হেল বপ’ ধূমকেতুকে। সাত বছর আগে, ২০১৩ সালে শেষবার টেলিস্কোপে ধরা দিয়েছিল যে ধূমকেতু তার নাম হল ‘প্যান স্টার’। তবে ভারতের সব জায়গা থেকে উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়নি তাকে।
Comments are closed.