সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে বন্ধ, মেয়েদের জন্য নিষিদ্ধ মোবাইল, ফতোয়া গুজরাতের ঠাকোর সম্প্রদায়ের মোড়লদের, পাশে কংগ্রেস বিধায়ক
অন্য সম্প্রদায়ে বিয়ে করা যাবে না। অবিবাহিত মেয়েরা ব্যবহার করতে পারবেন না মোবাইল ফোন। গুজরাতের বংসকণ্ঠা জেলায় ঠাকোর সম্প্রদায়ের মোড়লদের এই ফতোয়া ঘিরে এখন সমালোচনার ঝড়। মোড়লদের ফতোয়াকে সমর্থন কংগ্রেস বিধায়কের।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ ই জুলাই। গুজরাতের বংসকণ্ঠা জেলার ঠাকোর সম্প্রদায় অধ্যুষিত ১২ টি গ্রামের প্রায় ৮০০ জন মোড়ল একটি বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেন, যে সমস্ত ছেলে-মেয়েরা ভিন সম্প্রদায়ে বিয়ে করবেন, তাদের মা-বাবাকে জরিমানা দিতে হবে। ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, যদি ঠাকোর সম্প্রদায়ের কোনও মেয়ে অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেকে বিয়ে করে, তাহলে তার পরিবারকে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আর যদি ঠাকোর সম্প্রদায়ের কোনও ছেলে ভিন সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করে, তাহলে ছেলের পরিবারকে জরিমানা বাবদ দিতে হবে ২ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি, বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে, যদি ঠাকোর সম্প্রদায়ের কোনও অবিবাহিতাকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়, তাহলে তার দায় বর্তাবে মেয়েটির মা-বাবার উপর।
গুজরাতের ভাব কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক জেনিবেন ঠাকোর অবশ্য মোড়লদের ফতোয়ায় খারাপ কিছুই দেখছেন না। উল্টে তাঁর প্রশ্ন, অবিবাহিত মেয়েরা মোবাইলে ব্যস্ত থাকলে পড়াশোনা হবে কখন? এরপর সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, কেবল মেয়েদের মোবাইলে নিষেধাজ্ঞা কেন? তাঁর সপাট জবাব, মেয়েরা মোবাইলে হাত না দিলে, নিজে থেকেই মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দেবে ছেলেরা। বাড়ির মেয়েদের সহজেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব কিন্তু ছেলেদের নয়, বলেই বিশ্বাস জেনিবেন ঠাকোরের। তাই মোবাইল ফোন থেকে মেয়েদের দূরে রাখার ফতোয়া একেবারে সঠিক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য কংগ্রেস বিধায়কের।
মোড়লদের ফতোয়া নিয়ে সমালোচনা শুরু হতেই অবশ্য অন্য একটি দিক তুলে ধরা হয়। ঠাকোর সম্প্রদায়ের নেতা সুরেশ ঠাকোর বলেন, মোবাইলের বদলে আমরা মেয়েদের ট্যাবলেট আর ল্যাপটপ দেব। যাতে তাঁরা আরও ভালো করে পড়ায় মন দিতে পারে। অবিবাহিত মেয়েরা মোবাইলে সারাদিন ভিডিও তৈরি করে। ফলে পড়ায় ব্যাঘাত হয়। মেয়েদের মন পড়ায় ফেরাতেই এই উদ্যোগ বলে মন্তব্য সুরেশ ঠাকোরের। তবে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা হলেও, তাতে অবশ্য ফতোয়ার গুরুত্ব লঘু হয়নি।
মোড়লদের বৈঠকে আরও একাধিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সম্প্রদায়ের পুরুষ কিংবা মহিলার বিয়েতে খরচের বহর কমানোর নির্দেশ। ঠাকোর সম্প্রদায়ের মোড়লরা সাফ জানিয়েছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে ডিজে কিংবা আতশবাজির আতিশয্য করা যাবে না। তাতে যে টাকা বাঁচবে, তা সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার পিছনে খরচ করা হবে বলেও জানিয়েছেন সুরেশ ঠাকোর।
এদিকে গুজরাতের আরেক কংগ্রেস বিধায়ক অল্পেশ ঠাকোরও মোড়লদের ফতোয়ার পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, বিয়েতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে বলার মধ্যে কোনও অপরাধ নেই। বরং সেই টাকা যদি লেখাপড়ার পিছনে খরচ করা হয়, তাহলে তাকে বাহবা দিতে আপত্তি কোথায়?
Comments are closed.