পুরসভা-কর্পোরেশনে কাউন্সিলরদের পরিবারের কাউকে চাকরি নয়, স্বজনপোষণ বন্ধে নয়া ব্যবস্থা রাজ্যের

জনপ্রতিনিধির আত্মীয়দের পুরনিগম বা পুরসভায় চাকরি ‘পাইয়ে দেওয়া’র অভিযোগ শুনতে নারাজ মমতা ব্যানার্জির সরকার। তাই এবার থেকে নিয়োগেকারী সংস্থা দিয়েই খতিয়ে দেখা হবে চাকরি প্রার্থী পুরসভার মেয়র, কাউন্সিলর কিংবা পুর পরিষদের সদস্যের পরিবারের অংশ কিনা। যদি তা হয়, তবে মিলবে না চাকরি। এমনকী চাকরির প্যানেলে জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠ কারও নাম থেকে থাকলে, সংশ্লিষ্ট প্যানেলই বাতিল হবে। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে সম্প্রতি কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, রাজ্যের ১২৫ টি পুরনিগম ও পুরসভার একটিতেও আর মেয়র, চেয়ারম্যান, পুর পরিষদের সদস্য বা কাউন্সিলারের আত্মীয়রা চাকরি পাবেন না। তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজ (DLB) কে।

পুরনিগম ও পুরসভার চাকরিতে যদি স্বজনপোষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

নতুন পদ তৈরি থেকে কর্মী সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বে থাকে ডিএলবির উপর। পুরসভা ও পুরনিগমে চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করতে একেবারে উপরতলা থেকেই সংস্কারের ব্যাপারে মনস্থির করেছে সরকার। তাদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও ক্ষেত্রেই রাজ্যের পুরসভাগুলিতে স্বজনপোষণ বরদাস্ত করা হবে না। এতে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

কিছুদিন আগে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু পুরসভায় এই ধরনের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ এসেছে। বিশেষত ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায় এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে অসন্তুষ্ট নবান্ন। তাই এবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়ের নাম থাকলে সেই প্যানলই বাতিল হবে। এ নিয়ে রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, জন প্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ করলে মানুষের মধ্যে খারাপ ধারণা তৈরি হয়। তাই এবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সিলেকশন কমিটিতে যিনি থাকবেন, তাঁর আত্মীয়-পরিজন চাকরি পাবেন না। শুধু তাই নয়, মেয়র, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলারের বাড়ির লোকজনও চাকরি পেলে বা প্যানেলে নাম থাকলে, তা বাতিল হয়ে যাবে। ডিএলবির শীর্ষ কর্তাকে তিনি এমনই নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পুরমন্ত্রী।

জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়দের শ্রেণীবিভাগের বিষয়টিকে সঠিকভাবে ‘ফিল্টার’ করার কথা বিশেষভাবে ভাবা হচ্ছে। কারণ, কয়েকটি পুরসভার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, শুধু কাউন্সিলারের ছেলে, ভাই, ভাইপো বা পুত্রবধূই নন, দূরসম্পর্কের আত্মীয়ও চাকরি পেয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ভালো জায়গায় চাকরি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক কাউন্সিলার পদ ছেড়ে পুরসভার চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে বাদ পড়েছেন সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা। সেই বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের অনেকে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরে। এবার তাই কড়া পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার।

Comments are closed.