ভীমা কোরেগাঁও মামলায় নয়া মোড়। অভিযুক্ত সমাজকর্মী রোনা উইলসনের ল্যাপটপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভুয়ো নথি! যা পরবর্তীতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল রোনা সহ বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। নথি ঢোকাতে ব্যবহার করা হয়েছিল ম্যালওয়ার। চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে’। ম্যাসাচুসেটসের বিখ্যাত ফরেনসিক ল্যাবের এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে বম্বে হাইকোর্টেও। বুধবার রোনা উইলসনের আইনজীবী এই রিপোর্ট পেশ করে বম্বে হাইকোর্টে ভীমা কোরেগাঁও মামলা খারিজের আবেদন জানিয়েছেন।
২০১৭ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর রোনার ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার হয় ১০ টি নথি। একেই প্রমাণ হিসেবে চার্জশিটে তুলে ধরে পুণে পুলিশ। পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার যায় এনআইএ-এর হাতে। ভারতের ফরেনসিক ল্যাবে অবশ্য এই সংক্রান্ত কাজ হয়নি।
পরে তা পাঠানো হয় ম্যাসাচুসেটসের ল্যাবে। আমেরিকান ডিজিটাল ফরেনসিক সংস্থা আরসেনাল কনসালন্টিং অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারে, রোনার ল্যাপটপে ম্যালওয়ারের সাহায্যে ভুয়ো নথি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে এই নথিই রোনাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে আদালতে তুলে ধরে তদন্তকারী সংস্থা।
শুধু রোনা নয় ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত ভারভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজদের বিরুদ্ধে পেশ করা সব চিঠিপত্র ও তথ্যপ্রমাণও সাজানো বলে দাবি করা হয়েছে। এমনকী ভারভারা রাওয়ের আক্যাউন্ট হ্যাক করে রোনার সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। এইসব তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে আমেরিকান ডিজিটাল ফরেনসিক সংস্থা আরসেনাল কনসালন্টিংয়ের বিস্ফোরক রিপোর্টে। কিন্তু কারা করল? আর্সেনাল কনসালটিং অবশ্য তা বের করতে পারেনি।
[আরও পড়ুন- আন্দোলনজীবীরা কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে, সংসদে বললেন মোদী, কংগ্রেস-তৃণমূলের ওয়াক আউট]
এই ঘটনার পরই রোনা, ভারাভারা রাও, সোমা সেনদের গ্রেফতার করা হয়। আদালতে পুণে পুলিশ দাবি করে, রাজীব গান্ধীর মতো নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন ধৃতরা। এই ষড়যন্ত্রে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই মাওবাদী। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল ছিল আসল উদ্দেশ্য বলেও পুলিশ এবং এনআইএ আদালতে দাবি করেছে। কিন্তু আর্সেনাল কনসালটিংয়ের রিপোর্ট গোটা ঘটনার উপরই প্রশ্ন তুলে দিল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে রোনার কম্পুটারে ম্যালওয়্যারের সাহায্যে ভুয়ো নথি ঢোকানো হচ্ছিল, যার বিন্দুবিসর্গ জানতেন না রোনা নিজে। ফরেনসিক ল্যাব মনে করছে, এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ চক্রান্ত।
১৮১৮ সালে মহারাষ্ট্রের এই এলাকায় মারাঠাদের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনার যুদ্ধ হয়। মারাঠা বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিল পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও। কিন্তু ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন পেশোয়া। ব্রিটিশ বাহিনীর বেশিরভাগই ছিলেন মাহার দলিত সম্প্রদায়ের। এই জয়ের স্মৃতিতে ওই এলাকায় ‘জয় স্তম্ভ’ তৈরি করে ব্রিটিশরা। যাকে দলিতরা উঁচু জাতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাঁদের জয়ের প্রতীক হিসেবে দেখেন।
প্রতি বছর ১ জানুয়ারি এই সৌধে গিয়ে বিজয়ী বীরদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। কোরেগাঁও যুদ্ধের দুশো বছর উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান ঘিরে পুণের ভীমা কোরেগাঁও রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। মারাঠা-দলিত সংঘর্ষে একজনের প্রাণ যায়।
Comments are closed.