স্বাধীন ভারতে এই প্রথমবার একসঙ্গে চারজনের ফাঁসি হল। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫ টায় ফাঁসি হয় নির্ভয়া কাণ্ডের চার দোষী মুকেশ সিংহ, অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্তা ও বিনয় শর্মার। ফাঁসি দেন মেরঠ থেকে তিহাড় জেলে যাওয়া ফাঁসুড়ে পবন জহ্লাদ। এছাড়া ছিলেন জেল সুপারিন্টেনডেন্ট, এক মেডিক্যাল অফিসার, এক রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার, জেলাশাসক ও এক জেলকর্মী।
ফাঁসির দু’ঘণ্টা আগেও দোষীদের আইনজীবী মরিয়া চেষ্টা করেন ফাঁসি আটকানোর। সাত বছর আগে, ২০১২ সালে দিল্লির বুকে বছর তেইশের প্যারামেডিকেল ছাত্রীর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সময় এক দোষী নাবালক ছিলেন বলে সুপ্রিম কোর্টে ফের সওয়াল করেন আইনজীবী এ পি সিংহ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর ভানুমতী জানিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার পুনর্বিবেচনা করার কোনও প্রয়োজন নেই।
এরপর ফাঁসি আটকানোর আর কোনও আইনি রাস্তা ছিল না দোষীদের আইনজীবীর। রাত আড়াইটার সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর ভানুমতী, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি এ এস বোপান্না চার আসামির আইনজীবীর সওয়াল শোনেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন।
তিহাড় জেল সূত্রে খবর, ফাঁসির আগের রাতে একটুও ঘুমোয়নি চার আসামি। কোনও কিছু খেতেও অস্বীকার করে তারা। সকালেও জেলের তিন নম্বর কয়েদখানা থেকে তাদের বের করে আনার আগেও কিছু খাওয়ানো যায়নি। এরপর তাদের শারীরিক পরীক্ষা করেন মেডিক্যাল অফিসার। তারপর সময় মতো ফাঁসি হয় চার জনের।
ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ছয় আসামীর মধ্যে রাম সিংহ তিহার জেলেই আত্মহত্যা করে। অন্য এক আসামী নাবালক হওয়ায় তাকে জুভেনাইল কোর্টে পাঠানো হয়। এখন সে মুক্ত। বাকি চার আসামী, মুকেশ, পবন গুপ্তা, অক্ষয় সিংহ ও বিনয় শর্মাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে মোট তিনবার আদালত ফাঁসির নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি আইনি কারণে। শুক্রবার ফাঁসির আগে তিহাড় জেলের বাইরে গিজগিজে ভিড় দেখা যায়। সমাজকর্মী থেকে সাধারণ মানুষের হাতে পোস্টারে লেখা ছিল, নির্ভয়া অবশেষে বিচার পেল। নির্ভয়ার মা আশা দেবী জানান, অবশেষে দোষীদের ফাঁসি হল। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই এই দীর্ঘ যুদ্ধে পাশে থাকার জন্য।
Comments are closed.