লকডাউন পরবর্তী ভারতে অর্থনীতির হাল কেমন? কোনও দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য কেমন তা বোঝা যায় সে দেশের রিয়্যাল এস্টেটের অবস্থা দেখে। লকডাউন পরবর্তী সময় যখন বিপুল ছাঁটাই, বেতনে কোপ, কারখানায় তালা পড়ছে নিয়মিত তখন রিয়্যাল এস্টেটের অবস্থা যে খুব ভালো নয়, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু জানেন কি, দেশে অফিস স্পেস ছাড়ার হিড়িক পড়েছে? বড় বড় অফিস স্পেস নিয়ে যে সমস্ত কর্পোরেট বহুজাতিক কাজ সামলাচ্ছিল, লকডাউনে সেই বিশাল অফিস ঘরই ফাঁকা। কিন্তু কাজ আটকে নেই। কর্মীরা বাড়িতে বসেই অফিসের সমস্ত কাজ করে দিচ্ছেন। এই অবস্থায় ভাড়া নেওয়া অফিস স্পেস ছেড়ে দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। নতুন চুক্তিও আর রিনিউ করা হচ্ছে না।
রিয়্যাল এস্টেট প্রোপার্টি কনসালট্যান্ট নাইট ফ্র্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে ২০২০ সালের প্রথম ৬ মাসে দেশে ৬.৩ মিলিয়ন স্কোয়ার ফুট অফিস স্পেস সারেন্ডার করেছে বিভিন্ন সংস্থা। তার মধ্যে রয়েছে কলকাতাও।
বিশ্বের ব্যাক অফিস ক্যাপিটাল হিসেবে পরিচিত বেঙ্গালুরুতে সবচেয়ে বেশি অফিস স্পেস ছেড়েছে সংস্থাগুলো। নাইট ফ্র্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, বেঙ্গালুরুতে অফিস স্পেস ছেড়ে দেওয়ার হার বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। কলকাতায় বিভিন্ন বহুজাতিক ও কর্পোরেট সংস্থা ছেড়েছে ৫ লক্ষ স্কোয়ার ফুট অফিস স্পেস।
নাইট ফ্র্যাঙ্কের পূর্ব শাখার ডিরেক্টর স্বপন দত্ত জানাচ্ছেন, কোম্পানিগুলো বড় বড় অফিস স্পেস ছেড়ে ছোট জায়গা ভাড়া নেওয়ার পথে যাচ্ছে। বড় বড় যে সমস্ত চুক্তি আগেই হয়ে গিয়েছিল, তা আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। তাঁর আশঙ্কা, কলকাতা শহরে আরও একাধিক সংস্থা অফিস স্পেস ছেড়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে পারে।
লকডাউন পর্বে টিসিএস জানিয়েছিল, ২০২৫ এর মধ্যে তারা ৭৫ শতাংশ কর্মীকে বাড়ি থেকে কাজ করাবে। মাত্র ২৫ শতাংশ কর্মী অফিসে এলেই হবে। স্বভাবতই মাত্র ২৫ শতাংশ কর্মীর জন্য বিশাল অফিস ভাড়া নেবে না টিসিএস। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন বিরাট অফিস চালানোর দৈনন্দিন খরচ বাঁচবে, তেমনই অতিমারির সময় কর্মীদের মধ্যে নিরাপদ ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখাও সহজ হবে। টিসিএসের মতো ঘোষণা করে না হলেও বিভিন্ন সংস্থা এ পথেই চলছে। আর তাই ভাড়া নেওয়া বড় বড় অফিস স্পেস ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে।
সবমিলিয়ে দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের অন্যতম সূচক অফিস স্পেস ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে লকডাউন পরবর্তী অবস্থায় চরম শ্লথতা দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু কী অবস্থা আবাসন শিল্পে?
নাইট ফ্র্যাঙ্কেরই রিপোর্ট বলছে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, পুণে, হায়দরাবাদ ও আহমেদাবাদে সাকুল্যে ৫৯,৫৩৮ টি আবাসন বিক্রি হয়েছে। যা গত এক দশকে সর্বনিম্ন এবং গতবার এই সময়ের তুলনায় ৫৪ শতাংশ কম।
অর্থাৎ অফিস থেকে আবাসন, সব ক্ষেত্রেই ক্রমেই কমছে চাহিদা। আবাসন ক্ষেত্রের পরামর্শদাতারা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া আবাসন শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় নেই।
Comments are closed.