ওমপ্রকাশ মিশ্র: আমি ব্যক্তি মমতার বিরোধী নই, তবে তৃণমূল সরকারের কিছু কাজের ইস্যুভিত্তিক সমালোচনা তো করেইছি
লোকসভা ভোটের পরই সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতা ভেঙে যাওয়ার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র সহ রাজ্যের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন ওমপ্রকাশ মিশ্র। ইস্তফা দিয়েছিলেন কংগ্রেসের সহ সভাপতির পদ থেকেও। মঙ্গলবার সেই ইস্তফা গৃহিত হওয়ার পর বুধবারই বিধানসভায় গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন ওমপ্রকাশ মিশ্র। ব্যাখ্যা করলেন, কেন তিনি যোগ দিলেন তৃণমূলে।
প্রশ্ন: লোকসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূল ছাড়ার হিড়িক চলছে। এই পরিস্থিতিতে আপনার উল্টোপথে হাঁটার কারণ কী?
ওমপ্রকাশ মিশ্র: এটা ঠিকই লোকসভা ভোটের পর কেউ কেউ তৃণমূল ছেড়েছেন। কিন্তু আমার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পেছনে তাৎক্ষণিক কোনও কৌশলগত কারণ নেই। পুরো ব্যাপারটাই রাজনৈতিক। লোকসভা ভোটের আগের ও পরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। আমি বারবার কংগ্রেসের মধ্যে বলেছি, লোকসভা ভোটের পর বৃহত্তর স্বার্থে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই কেন্দ্রীভূত করা দরকার। কিন্তু রাজ্য কংগ্রেসের কয়েকজন নেতা যে নীতি নিয়ে চলছেন, তার সুবিধে বিজেপি পাচ্ছে। লোকসভার ফলেও তা প্রমাণিত। রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা এখন বলছেন, সিপিএমের সঙ্গে চলবেন। কিন্তু সিপিএম বা কংগ্রেস হাইকমান্ড এ নিয়ে কিছু বলছেন না।
আমি মনে করি, তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের বোঝাপড়া করে চলা উচিত। এই দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু মূল লড়াই হওয়া উচিত বিজেপির বিরুদ্ধে। তা তো রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব করছেনই না। বরং আমার যে রাজনৈতিক লাইন নিয়ে দলের ভেতরে বা বাইরে বিতর্ক হচ্ছে, তার মধ্যেই আমার ইস্তফা গ্রহণ করলেন। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাকে তৃণমূলে যোগ দিতে হল। এখন এটা স্বীকৃত সত্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের প্রধান বিশ্বাসযোগ্য মুখ।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি তো তৃণমূলের কট্টর বিরোধী বলে পরিচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও তীব্র সমালোচক। সাধারণ মানুষ তো এই প্রশ্নও তুলছেন।
ওমপ্রকাশ মিশ্র: দেখুন আমি ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী নই। তবে হ্যাঁ, তাঁর সরকার পরিচালনা নিয়ে ইস্যুভিত্তিক কিছু সমালোচনা আমি অবশ্যই করেছি। পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস, রাজ্যে গণতন্ত্র, কিছু সরকারি নীতির সমালোচনা আমি করেছি। কিন্তু লোকসভা ভোটের রেজাল্টের পর বৃহত্তর স্বার্থে এই সমস্ত বিষয় আর মূল রাজনৈতিক ইস্যু হতে পারে না। এখন রাজ্যের মূল ইস্যু, বিজেপিকে ঠেকানো। কংগ্রেস নেতারা একটা কথা বুঝতে পারছেন না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালো-খারাপ যাই করুন না কেন, তৃণমূল যদি হেরে যায় তবে তো পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে না, আসবে তো বিজেপি। তাই বিজেপিকে ঠেকানোই এখন মূল কাজ। তাছাড়া যে অভিযোগগুলো তৃণমূল সম্পর্কে করতাম, তার অনেক কিছুরই এখন শুদ্ধকরণ চলছে।
প্রশ্ন: অনেকেই অভিযোগ করছেন, আপনি ক্ষমতা এবং পদের লোভে তৃণমূলে গিয়েছেন।
ওমপ্রকাশ মিশ্র: তাই যদি কারণ হোত, তবে আমি অনেক আগেই দলবদলের কথা ভাবতে পারতাম। এখন লোকসভা ভোটে এই ফল, তার মধ্যে অনেকে যখন তৃণমূল ছাড়ছেন, সেই সময় যেতাম না। আমি কংগ্রেসের মধ্যে একটা রাজনৈতিক প্রশ্ন তুলেছিলাম লোকসভা ভোটের ফলের পরই। কিন্তু তারপরও দেখছি, কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের কার্যকলাপ বিজেপিকে সুবিধে পাইয়ে দিচ্ছে। এরপর আর কংগ্রেসে থাকা যায় না।
Comments are closed.