সম্প্রতি অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রে নিজেই জানিয়েছেন তাঁর মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কথা। নিউইয়র্কে তাঁর চিকিৎসা চলছে। কিন্তু কী এই মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই প্রকারের ক্যান্সার প্রকৃতিতে জটিল। চিকিৎসার পরিভাষায় এই ধরনের ক্যান্সারকে স্টেজ ফোর ক্যান্সার বা ‘অ্যাডভান্সড স্টেজ’ বলা হয়।
ডাঃ অর্ণব গুপ্তা
সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা তথা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ অর্ণব গুপ্তা জানিয়েছেন, ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা না পড়লে, ক্রমে বাড়তে বাড়তে তা মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের রূপ নেয়। হয়তো শরীরের ভিতরে কোনও অংশে ক্যান্সার বাধা বঁধেছে, কিন্তু ব্যাথা না হওয়ায় বা দেহে অস্বাভাবিক কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় রোগী বিষয়টি বুঝতে পারেননি। পরে যখন ওই ক্যান্সার কোষ শরীরের অন্যত্র আঘাত হানে তখন রোগের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা ধরা পড়ে অনেক পরে বা ‘অ্যাডভান্সড স্টেজ’এ, ফলে তখন বিশেষ কিছু করার থাকে না। তাই, মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রধানত কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের মাধ্যমেই চিকিৎসা চলে। ডাঃ গুপ্তা জানিয়েছেন, শরীরের প্রাথমিক আক্রান্ত স্থান থেকে পাশের কোনও গ্ল্যান্ড বা শরীরের কোনও অংশে ছড়াতে পারে ক্যান্সার কোষ। অথবা রক্ত ও লসিকার মাধ্যমেও দেহের দূরবর্তী কোনও স্থানে পূণরায় ছড়িয়ে পরতে পারে ক্যান্সার। শরীরের এক জায়গা থেকে অন্যস্থানে ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়তে কয়েক মাস থেকে বছর খানেকও লাগতে পারে। আর মাঝের এই সময়টিতেই (যেহেতু প্রাথমিকভাবে বুঝতে না পারায় চিকিৎসা শুরু করা যায়নি এবং রোগটি ছড়িয়ে পড়তেও অনেকটা সময় ব্যয় হয়ে যায়) জটিলরূপ ধারণ করে ক্যান্সার। ফলে যখন শরীরে ক্যান্সারের উপস্থিতি ধরা পরে ততদিনে তা মেটাস্ট্যাটিক বা ‘অ্যাডভান্সড স্টেজ’এ পৌছে যায়।
ডঃ উৎপল সান্যাল
বিশিষ্ট ক্যান্সার গবেষক এবং চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন সহ-অধিকর্তা ডঃ উৎপল সান্যাল জানিয়েছেন, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, হাড়, মহিলাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্টসহ শরীরের যে কোনও অংশ আক্রান্ত হতে পারে মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সারে। যেহেতু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনও বয়স নেই, তাই যে-কেউ, যে কোনও বয়সে এর কর্কট ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীরের উপরের বা বাইরের কোনও অংশ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তা শারীরিক পরিবর্তন (অতিরিক্ত জমাট কোনও মাংস পিণ্ড বা গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া) বা ব্যথা বেদনা থেকে প্রাথমিক অবস্থাতেই অনেক সময় ধরা পড়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হয় শরীরের ভিতরে কোনও জটিলতা দানা বাঁধলে। নজরের বাইরে হওয়ায় অনেক সময় তা ধরা পড়ে না বা অনেক পরে তা ধরা পড়ে। তাই হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট, ঝিমুনিভাব বা মল-মূত্রের সঙ্গে রক্ত পড়লে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।