টানা ৪১ বছর ধরে রোজ নিয়ম করে পড়ুয়াদের দরজায় দরজায় বই পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। যার জন্য তাঁকে রোজই প্রায় ১২ কিমি পথ হাঁটতে হয়। যদিও এই কাজে একটিও ক্লান্ত হন না তিনি। উপরন্ত বইকে সঙ্গী করে গ্রামের পথে পথে হাঁটতে বেশ উপভোগই করেন। রোজই ৬০-৭০ টি বই এবং দুপুরের খাওয়ার সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পি সুকমারণ। পৌঁছে যান ৩৫ থেকে ৪০ জন পড়ুয়ার বাড়ি।
কেরালার এক ছোট্ট গ্রাম কুমারাপুরাম। গ্রামেই ছোট্ট দু’কামরার কুমারাপুরাম পাবলিক লাইব্রেরি। ১৯৭৯ সালে ২০ বছর বয়েসে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে চাকরি যোগ দেন পি সুকুমারণ। কারুভাট্টা এবং কুমারাপুরাম দুই গ্রামে দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই দিয়ে আসছেন তিনি। তাঁর কাজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে জানান, আমি বই যতটা ভালোবাসি, ততটাই ভালোবাসি এভাবে বই নিয়ে পড়ুয়াদের বাড়ি পৌঁছে যেতে।
সাইকেল চালাতে জানেন না, তাই ভরসা একমাত্র হাঁটা। বললেন, এইভাবে বই নিয়ে গ্রামের পথে পথে হাঁটতে একটুও ক্লান্ত হইনা। বরং পথের চারপাশের প্রকৃতি, সবুজ আমায় রোজ নতুন করে উদ্বুদ্ধ করে। ৬১ বছরের সুকুমারণ আরও জানালেন, দেখুন বই আদান প্রদানের সঙ্গে প্রত্যেক পড়ুয়ারার সঙ্গে তাঁর ভালোলাগা, খারাপ লাগারও আদান প্রদান হয়। কত রকম নতুন চিন্তার কথা জানতে পারি, নিজের ভালোলাগা খারাপ লাগাও তাঁদের জানাতে পারি। সবার উপর বই নিয়ে আমাদের মধ্যে যে উন্মাদনা, একপ্রকার তারও উদযাপন হয়। এটা কম বড় পাওয়া নাকি ?
১৯৫০ সালে কুমারাপুরাম পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা হয়। পি সুকুমারণ বলেন, প্রথম দিকে পড়ুয়াদের ভিড়ে সরগরম থাকতো লাইব্রেরি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পড়ুয়ারা সংখ্যা কমতে থাকে। একটা সময় প্রায় ফাঁকা হয়ে যায় লাইব্রেরি। অনেকে বই পড়তে ভালোবাসেন অথচ যে কোনও কারণেই হোক লাইব্রেরিতে আসতে পারতেন না। পড়ুয়ারা লাইব্রেরি তে যখন পৌঁছে পারছেন না, তখন ঠিক করি লাইব্রেরিকেই পড়ুয়াদের বাড়ি পৌঁছে দেব। সেই পথ চলা শুরু।
সোম থেকে শনি রোজ সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে লাইব্রেরিতে এসে পৌঁছান সুকুমারণ। তারপর সকাল ১০.৩০ থেকে বই সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। ফেরেন বিকেল ৪ টেয়।
সুকুমারণ নিজেও একজন বইপোকা। নিয়মিত বেশ কয়েক ঘন্টা বই পড়ে কাটান। পড়ুয়াদেরকেও নিজেদের রুচি অনুযায়ী বই বাছাই করে দেন। এখানেই শেষ নয়, পড়ুয়াদের সঙ্গে সদ্য পড়া বই নিয়েও দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করা সুকুমারণের অত্যন্ত প্রিয় কাজ।
পড়ুয়ার অভাবে পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরিগুলি একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দশকে যে কত শতাব্দী প্রাচীন লাইব্রেরি হারিয়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এই আবহে সুকুমারণের মতো মানুষেরা বই টিকিয়ে রাখতে কার্যত নিঃশব্দে লড়াইয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন।
Comments are closed.