আমি তখন স্কুল ছাত্র। আমার কাকাকে মাঝেমাঝেই ব্রিটিশ পুলিশ প্রিভেনটিভ ডিটেনশনের নামে জেলে পুরে দিত। কাকাকে জিজ্ঞেস করতাম, আচ্ছা কাকা, তোমাদের যখনতখন গ্রেফতার করার যথেচ্ছাচার বন্ধ হবে কবে? কিছুটা হতাশ সুরে কাকা বলতেন, ব্রিটিশ রাজ শেষ হলে।
ব্রিটিশ জমানা শেষ হয়েছে। বহু ঘাত প্রতিঘাতের পেরিয়ে ২০২০ সালের ভারতে বিজেপির শাসন। কেমন আছে ভারত? জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে জার্মান বুক অফ ট্রেডের বিচারে এ বছরের শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। সেই মঞ্চ থেকে নিজের জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরে বর্তমান ভারত তথা বিশ্ব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলেন অধ্যাপক সেন। বললেন, আজ যখন পিছন ফিরে দেখি, মনে হয়, ব্রিটিশ রাজ শেষ হয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রিভেনটিভ ডিটেনশন জগদ্দল পাথরের মতো আজও বর্তমান। আজ তার নাম UAPA।
প্রশ্ন করো না, মুখ বুজে সব মেনে নাও। গোটা বিশ্বে চলছে কর্তৃত্ববাদের অতিমারি। কেমন সেই অতিমারির স্বরূপ? অধ্যাপক সেনের বক্তৃতায় উঠে এসেছে ছাত্র নেতা উমর খালিদের নাম। তিনি বলেন, শাসকের অন্যায়ের প্রতিবাদ অহিংসা দিয়ে দেওয়ার সওয়াল করে আজ দেশের অন্যতম ছাত্র নেতা উমর খালিদ জেলে। অধ্যাপক সেনের কথায়, সরকার পক্ষের লোকেরা গুলিয়ে ফেলছেন, সরকার বিরোধী আর দেশ বিরোধী এক জিনিস নয়। এখন সরকারের কোনও কাজের সমালোচনা করাকে দেশদ্রোহ হিসেবে দেখার রেওয়াজ চলছে ভারতে।
বরাবর বিজেপি তথা মোদী সরকারের কট্টর সমালোচক অমর্ত্য সেন বলছেন, অনেকটা এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ১৯৭৭ সাল নাগাদ। কিন্তু ভারতের মানুষের সম্মিলীত প্রতিরোধের মুখে গণতন্ত্রের পতন ঠেকানো গিয়েছিল। এবার আক্রমণ আরও আগ্রাসী, আরও নির্মম। ব্রিটিশ আমলের প্রিভেনটিভ ডিটেনশন আজ UAPA নাম নিয়ে আরও ভয়ঙ্কর। বলেন নোবেলজয়ী প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক লাভের আশায় হিন্দু প্রধান ইতিহাস রচনার অপচেষ্টা চলছে। মূল উদ্দেশ্য হল, সংখ্যালঘু (এক্ষেত্রে মুসলিম) অংশকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখা। এটা করতে গিয়ে ভারতের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস অর্থাৎ হিন্দু-মুসলিমের যৌথ ইতিহাসকে অস্বীকার করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা হাস্যকর। ভারতে শুধু মুসলিমরাই নন, ক্ষমতাসীনের এক চোখামির শিকার হয়েছে দলিত-আদিবাসীরাও। শাসকের লাগামছাড়া কর্তৃত্ববাদের শিকার সমস্ত স্বাধীন চিন্তার মানুষ। এক চিত্র দুনিয়ার সর্বত্র। যে পরিস্থিতিকে নোবেলজয়ী অধ্যাপক বর্ণনা করছেন কর্তৃত্ববাদের অতিমারি হিসেবে।
Comments are closed.