চমকপ্রদ উত্থানের পর গত বছর থেকে পতঞ্জলির ব্যবসায়ে দ্রুত ভাটা! কেন মুখ ফেরাচ্ছেন ক্রেতারা, চিন্তায় রামদেব

দ্রুত এবং চমকপ্রদ উত্থানের পর হঠাৎ ভাটা রামদেবের পতঞ্জলির ব্যবসায়?
২০০৬ সালে পথ চলা শুরু রামদেবের এবং সেই সঙ্গে শুরু তাঁর সংস্থা পতঞ্জলির। নারকেল তেল থেকে আয়ুর্বেদিক পথ্য, ডাল, তেল, চিনি কিংবা টুথপেস্ট, বিস্কুট, বাজারে আসার পর থেকেই হট কেক। ভারতের বাজার ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী অনাবাসী ভারতীয়দের কাছেও যেন এক নতুন দিগন্তের বার্তা দিয়েছিল পতঞ্জলি। সস্তায়, প্রকৃত ভারতীয় ঘরাণায় তৈরি পতঞ্জলির দ্রব্য সহজেই জিতে নিয়েছিল ক্রেতাদের মন। গত কয়েক বছরে হিন্দু জাতীয়তাবাদের রমরমায় ভর করে রামদেবের পতঞ্জলিও উড়ছিল স্বপ্নের উড়ানে।
২০১৭ সালে একটি অনুষ্ঠানে রামদেব বলেছিলেন, পতঞ্জলির বার্ষিক লাভের অঙ্ক দেখলে বিদেশি বহুজাতিক প্রতিযোগীদের যোগাসন ‘কপালভাতি’ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। বলেছিলেন, ২০১৮ আর্থিক বছরের শেষে সংস্থার লাভ পৌঁছবে ২ হাজার কোটি টাকায়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি পতঞ্জলির বিক্রি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ, অঙ্কের হিসেবে যা ৮,১০০ কোটি টাকা। এখানেই শেষ নয়, কেয়ার রেটিংস বলছে, ২০১৮ আর্থিক বছরে ৩১ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে পতঞ্জলির বিক্রি কমে হয়েছে মাত্র ৪,৭০০ কোটি টাকা।
কিন্তু কেন এমন হল? রামদেবের সংস্থায় কাজ করা প্রাক্তন কর্মীরা বলছেন, সংস্থার দূরদৃষ্টির অভাব। শুরু থেকেই ভবিষ্যত পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তারই ফল ভুগছে পতঞ্জলি। তাদের দাবি, বহুজাতিক বিভিন্ন সংস্থা যেখানে অত্যাধুনিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে পণ্য বিপণনকে সহজতর করে তুলছে, সেখানে পতঞ্জলির সফটওয়্যার মান্ধাতা আমলের।
প্রায় তিন দশক আগে একটি সংস্কৃত শিক্ষাকেন্দ্রে রামদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বালকৃষ্ণ নামে এক যুবকের। ২০১৮ সালে দায়ের করা তথ্য অনুযায়ী, পতঞ্জলির ৯৮.৫৫ শতাংশ শেয়ারই ওই বালকৃষ্ণের হাতে। রামদেব পতঞ্জলির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ভিন্ন আর কিছুই নন। সংস্থার আয় কমে যাওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স বালকৃষ্ণের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল। উত্তরে বালকৃষ্ণ জানিয়েছেন, সংস্থা বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে, তাই আগামী দিনে লাভের পরিমাণ বাড়বে। তবে ঠিক কী কারণে বিক্রি কমছে, তা অবশ্য খোলসা করেননি বালকৃষ্ণ।
পতঞ্জলির উত্থান এবং কর্মপদ্ধতি খুব কাছ থেকে দেখেছেন এমন মানুষরা বলছেন, সংস্থার ইউএসপি ছিল সস্তায়, ভালো মানের পণ্য সরবরাহ। কিন্তু ব্যবসা বাড়াতে গিয়ে এতে আপোশ করেছে পতঞ্জলি। বাইরে থেকে পণ্য কিনে, তাতে পতঞ্জলির সিল মেরে বিক্রি করতে গিয়ে মানের সঙ্গে আপোশ করায় ক্রেতারা মুখ ফিরিয়েছেন। পতঞ্জলিতে পণ্য সরবরাহকারীদের টাকা আটকে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এক সরবরাহকারীর দাবি, আগে দু-তিনমাস দেরি করে পাওনা মিলত। কিন্তু এখন পাওনা মিলতে ছ’মাস সময় লেগে যাচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স মুম্বইয়ে পতঞ্জলির একটি বিপণিতে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, দোকানে রাখা মোট ৮১ টি পণ্যের মধ্যে ২৭ টিই তৈরি হয়েছে বাইরে। পতঞ্জলি সেই সামগ্রী কিনে নিজের সিল দিয়ে বিক্রি করছে।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর দ্রুত উত্থান হচ্ছিল পতঞ্জলির। টেলিভিশনে যোগ শিখিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া রামদেবের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতাও সর্বজনবিদিত। সরাসরি ভোটের প্রচার থেকে যোগ-মঞ্চে মোদী বন্দনা, সবই করেছেন রামদেব। কিন্তু নোটবন্দি এবং জিএসটি চালু হওয়ার পর রামদেবের ব্যবসায় মন্দা শুরু। সেই সময় থেকেই পতঞ্জলির লাভ ক্রমেই নিম্নমুখী।

Comments are closed.