PK: নির্বিকল্প মমতা, জোর দিয়ে বলছি বাংলায় BJP-র আশা নেই, লড়াইয়ে নেই বাম-কংগ্রেস
প্রশান্ত কিশোর: তৃণমূল কর্মীরা দিদির উপর ভরসা হারাননি
লোকসভায় খারাপ ফলের পর তৃণমূল প্রচার পরিকল্পনার দায়িত্ব দেয় প্রশান্ত কিশোরকে(PK)। ট্যুইট এবং সম্প্রতি দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে সেই প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন বাংলায় বিজেপি সরকার গড়া তো দূর অস্ত ১০০ আসনের গণ্ডি পেরোতে হিমসিম খাবে। তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি।
প্রথম দফা ভোটের মাত্র ক’দিন আগেও একইরকম আত্মবিশ্বাসী পিকে। ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের ন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এডিটর সঙ্কর্ষণ ঠাকুরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিকে বললেন, বিজেপির বাংলা জয়ের একমাত্র উপায় ছিল মমতা ব্যানার্জির দলকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলা। কিন্তু তাতে তারা ব্যর্থ। স্বভাবতই জোরের সঙ্গে বলতে পারি বাংলায় বিজেপির কোনও আশা নেই, বলেন তৃণমূলের নির্বাচনী কৌশলী।
পিকে বলেন, বিজেপি ভেবেছিল মমতা ব্যানার্জির দলকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলেই অনায়াসে বাংলা জয় করে ফেলা যাবে। মুকুল রায় থেকে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব ব্যানার্জিদের দলে টেনেও সেই কাজে সফল হতে পারেনি গেরুয়া শিবির। মমতা ব্যানার্জির জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতায় সামান্য ধাক্কাও দিতে পারেনি বিজেপি। তৃণমূল কর্মীরা দিদির উপর ভরসা হারাননি। তাই ১০ বছরের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা কেবলমাত্র স্থানীয় স্তরেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলে তার কোনও প্রভাব পড়েনি।
প্রশান্ত কিশোরের মতে টানা দশ বছর কোনও সরকার ক্ষমতায় থাকলে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা স্বাভাবিক। কিন্তু তা শুধুমাত্র স্থানীয় স্তরের তৃণমূলের নেতাদের ক্ষেত্রেই কাজ করেছিল। তৃণমূলের মুখ মমতা ব্যানার্জির প্রভাব বাংলার জনমানসে একই রয়েছে বলে, মত পিকের। পাশাপাশি তাঁর যুক্তি, স্থানীয় স্থরের নেতাদের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ কাজ করেছিল, শুভেন্দুরা বিজেপিতে যাওয়ার সময় সেই ক্ষোভও সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন।
[আরও পড়ুন- একই আবাসনে ৪ তারকা প্রার্থী! নাজেহাল আবাসিকরা]
পাশাপাশি পিকের কথায় উঠে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের কথা। তিনি বলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র বাঁচাতে বাংলায় তৃণমূলের জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলায় তৃণমূল হেরে গেলে তার প্রভাব হবে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। দেশে বিরোধীরা মনে করতে শুরু করবেন বিজেপি অপরাজেয়। এক দেশ, এক দল, এক নীতি প্রয়োগে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে বিজেপি-আরএসএস। পিকের কথায়, সাম্প্রতিক ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট হতে যাচ্ছে বাংলায়। যেখানে ভবিষ্যতের একটি দিশা নির্দেশ মিলবে।
প্রশান্ত কিশোর বলেন, বিজেপি বাংলায় হারলেও তাদের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কিন্তু বাকিদের সেই সুযোগ নেই। কারণ লড়াইটা অস্তিত্ব রক্ষার।
সাক্ষাৎকারে পিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, নিঃসন্দেহে একজন বড় নেতা। ওঁর নির্দিষ্ট ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে, তবে ভুলে গেলে চলবে না এটা লোকসভা ভোট নয়। বিধানসভা ভোটে মমতার গ্রহণযোগ্যতার কাছে মোদী ম্যাজিকের কোনও প্রভাব নেই। তিনি বলেন, সারা দেশজুড়ে দেখা গিয়েছে লোকসভা ভোটের তুলনায় বিধানসভা ভোটে সবসময়ই বিজেপির ভোট শতাংশ কমে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সম্প্রচারিত একাধিক ওপিনিয়ন পোলেও তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তবে পিকে স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাংলায় বিজেপির শক্তিকে হেলাফেলা করার কোন প্রশ্নই নেই। বাম-কংগ্রেস জোটের কোনও প্রভাব পড়বে না। বস্তুত বাংলার ভোট তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ বলে মনে করেন পিকে।
বিজেপি নেতাদের বাংলায় ২০০ আসন পাওয়ার দাবিকেও মনগড়া বলে দাবি করেছেন মমতার ভোট কুশলী। পিকে বলেন, ২০০ আসন পেতে গেলে রাজ্যে অন্ততপক্ষে ৯ টি জেলায় একছত্র দখল থাকতে হবে। বিজেপির তা নেই। পিকে বলেন, বাংলায় প্রভূত শক্তি বাড়ালেও এখনও বিরোধী হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে বিজেপিকে।
Comments are closed.