আদালত অবমাননার দায়ে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে এক টাকা জরিমানা করল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই জরিমানা দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তিন মাসের হাজতবাস। অথবা আইনজীবী হিসেবে কাজ করা তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ।
সোমবার রায়দানে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ‘বাক-স্বাধীনতা রোধ করা যায় না। কিন্তু তা অবাধ নয়। আমরা প্রশান্ত ভূষণকে অনুতপ্ত হওয়ার অনেক সুযোগ করে দিয়েছি। হতে পারে আপনি কয়েকশো ভালো কাজ করেছেন। তার মানে এই নয় যে আপনি ১০টা অপরাধ করার লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছেন।’ সেই সময় প্রশান্ত ভূষণ জানিয়েছিলেন, ক্ষমা চাইলে তা হবে নিজের বিবেকের অবমাননা।
সোমবার প্রশান্ত ভূষণ জানিয়েছেন, জরিমানা দেবেন নাকি আদালতের অন্য বিকল্পের মুখোমুখি হবেন তা নিয়ে একটি ‘কালেক্টিভ ডিসিশন’ নেওয়া হবে।
গত ২৭ জুন সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে একটি ট্যুইট করেছিলেন আইনজীবী ও সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণ। লিখেছিলেন, ‘ইতিহাসবিদরা ভারতের এই শেষ ছয় বছরের দিকে নজর ঘোরাবেন, তাঁরা দেখবেন কীভাবে আনুষ্ঠানিক জরুরি অবস্থা ছাড়া দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে এবং এতে সুপ্রিম কোর্ট ও বিশেষত তার শেষ চার প্রধান বিচারপতির বড় ভূমিকা নজরে আসবে।’ আর একটি ট্যুইটে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের হার্লে ডেভিডসন বাইক চড়া ছবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রশান্ত ভূষণ। এর সপ্তাহদুয়েক পরে ভূষণের সেই টুইটের প্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান মেহেক মাহেশ্বরী নামে এক আইনজীবী। সেই আর্জির ভিত্তিতে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে ২২ জুলাই আইনজীবী ভূষণকে নোটিশ পাঠায় শীর্ষ আদালত।
তারপর চলতি মাসের পাঁচ তারিখ শীর্ষ আদালতে সেই মামলার শুনানি হয় এবং ১৪ অগস্ট ভূষণকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত অবমাননার জন্য তাঁর কী শাস্তি হবে, সেই সিদ্ধান্তের জন্য ২০ অগস্ট মামলার শুনানি ধার্য করা হয়। সেদিন শুনানির সময় ভূষণ জানান, নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন তিনি। একটি বিবৃতি পড়ে ভূষণ দাবি করেন, তাঁর উদ্দেশ্যের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেদিন নিজের অবস্থান নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রবীণ আইনজীবীকে দু’দিন সময় দেয় শীর্ষ আদালত। কিন্তু ২৪ অগস্টও নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন ভূষণ।
এদিকে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী-সহ প্রাক্তন বিচারপতি এমনকি বুদ্ধিজীবীরা চিঠি লিখে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের পাশে দাঁড়ান৷ মামলার শুনানি চলাকালীন বিশিষ্ট প্রবীণ এই আইনজীবীর অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালও৷ বিচারপতি অরুণ মিশ্রর কাছে তাঁর আর্জি ছিল, ‘প্রশান্ত ভূষণকে সাজা দেবেন না৷’ এর পরে ভূষণকে সাজা না দেওয়ার আর্জি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে এবং বিচারপতি অরুণ মিশ্রকে খোলা চিঠি লেখেন ১২২ জন আইন পড়ুয়া৷
Comments are closed.