গোরখপুর শিশু মৃত্যু: কাফিল খানকে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি, প্রাণ বাঁচানোর জন্য করা হল প্রশংসা

অক্সিজেনের অভাবে গোরখপুরের হাসপাতালে শিশুদের মৃত্যু মিছিলের ঘটনায় নির্দোষ চিকিৎসক কাফিল খান। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং বহু শিশুর প্রাণ বাঁচানোর জন্য কাফিল খানের প্রশংসা করা হয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকারের মুখ্য সচিবের তদন্ত রিপোর্টে।
২০১৭ সালের ১০ অগাস্ট। গোরখপুরের বিআরডি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হঠাৎই অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়। অক্সিজেনের অভাবে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ৬৩ শিশুর। অভিযোগ ওঠে, অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থাকে টাকা দেয়নি গোরক্ষপুরের সরকারি হাসপাতাল। তারাও অক্সিজেন যোগান বন্ধ করে দেয়। ফলে হঠাৎই ফুরিয়ে যায় অক্সিজেন। সেদিন নিজের চেষ্টায় অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে বহু শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ডাঃ কাফিল খান। যদিও ডাক্তার খানের এই উদ্যোগ ভালোভাবে নেয়নি যোগী আদিত্যনাথের সরকার। কাফিল খানের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি, দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলা, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মতো অভিযোগ করে হাসপাতাল থেকে তাঁকে বরখাস্ত করে উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার। ২০১৭ সালের এই ঘটনার দায় চিকিৎসক কাফিল খানের ঘাড়ে চাপান খোদ মুখ্যমন্ত্রী যোগী। অক্সিজেনের অভাবের বদলে চিকিৎসকের গাফিলতিকে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর ৯ মাস জেল খেটেছেন কাফেল খান। পরে জামিনে মুক্তি পান। দীর্ঘ দু’বছর কেটে যাওয়ার পর তাঁকে নির্দোষ বলে রিপোর্ট দিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকারের তদন্তকারী প্যানেলের রিপোর্ট। সর্বভারতীয় ইংরেজি নিউজ পোর্টাল scroll.in এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৮ ই অগাস্ট রাজ্য সরকারকে এই রিপোর্ট জমা দেয় তদন্তকারী প্যানেল। কিন্তু ৫ মাস কেটে গেলেও সেই রিপোর্ট বাইরে আসেনি। কিন্তু সম্প্রতি এক আরটিআইয়ের প্রেক্ষিতে স্বীকার করা হয়েছে, ওই ঘটনায় কোনও হাত ছিল না কাফিল খানের। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগেরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসের সেই ঘটনায় ডাঃ কাফিল খানের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে তদন্তকারী রিপোর্টে।
রিপোর্টে বলা হয়, সেই রাতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা সামাল দেওয়ার সর্বোত্তম চেষ্টা করেন কাফিল খান। নিজের চেষ্টায় একটি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের যে অভিযোগ করা হয়েছিল, রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালের অগাস্ট মাসেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে দিয়েছিলেন ডাক্তার কাফিল খান। সর্বোপরি যে বিভাগে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল, রিপোর্ট বলছে, সে বিভাগের দায়িত্বেই ছিলেন না কাফিল খান। তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি ও দুর্নীতির অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘সঙ্গতিহীন’ বলা হয়েছে রিপোর্টে।
এরপরও কাফিল খানকেই দুষছেন যোগী আদিত্যনাথ। এই রিপোর্টকেও মান্যতা দেয়নি উত্তর প্রদেশ সরকার। গত ১৬ ই সেপ্টেম্বর ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদিত্যনাথ দাবি করেন, ওই হাসপাতালে অক্সিজেনের কোনও অভাব ছিল না। নাটক করে একে বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কাফিল খান কী বলছেন? তাঁর দাবি, নিজের দোষ ঢাকতে তাঁকে বলির পাঁঠা করে ৯ মাস জেল খাটিয়েছে সরকার। এখনও তিনি হাসপাতাল থেকে সাসপেন্ড!

Comments are closed.