চুনী কোটালের স্মৃতি উস্কে নজিরবিহীন কাণ্ড রবীন্দ্রভারতীতে, জাত তুলে অপমানের প্রতিবাদে ইস্তফা পাঁচ অধ্যাপকের
চুনী কোটালের স্মৃতিই ফের উস্কে উঠল ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নজিরবিহীন ঘটনাকে কেন্দ্র করে। জাতি বিদ্বেষ প্রায় তিন দশক আগে কেড়ে নিয়েছিল রাজ্যের প্রথম লোধা স্নাতক চুনী কোটালের জীবন।
নজিরবিহীন জাতি বিদ্বেষের অভিযোগকে কেন্দ্র করে এবার উত্তাল ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সহকর্মীর জাত ও লিঙ্গ তুলে লাগাতার অপমানের প্রতিবাদে ইস্তফা দিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ অধ্যাপক। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, বৃদ্ধি পেতে পারে পদত্যাগী অধ্যাপকের সংখ্যা। গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের দিকে। যদিও তারা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই ঘটনার জেরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে নজিরবিহীন অচলাবস্থা।
দ্রুত তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য। পরিস্থিতি সামলাতে মঙ্গলবার দুপুরেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অধ্যাপকদের ইস্তফা তুলতে আবেদন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতি বিদ্বেষের অভিযোগ নতুন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের এক অধ্যাপিকার অভিযোগ, ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা তাঁর জাত এবং লিঙ্গ নিয়ে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে তাঁকে হেনস্থা করেছে। মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে ওই অধ্যাপিকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রভারতীর ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে।
গত ২৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই অধ্যাপিকা। এরপর আরও চার অধ্যাপক একই অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তদন্ত নিয়ে সিরিয়াস নয়। এরই প্রতিবাদে সোমবার গণ ইস্তফার পথে গিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। ইতিমধ্যেই গণ ইস্তফা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত, পলিটিকাল সায়েন্স, অর্থনীতি এবং এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপকরা। সেই সঙ্গে ইস্তফা দিয়েছেন ডিরেক্টর অফ আম্বেডকর স্টাডি সেন্টার, বাংলাদেশ স্টাডি সেন্টার এবং স্কুল অফ ল্যাঙ্গোয়েজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপকরা। এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে এক নজিরবিহীন অচলাবস্থা। গণ ইস্তফা দেওয়া অধ্যাপকদের অভিযোগ, এমন অভিযোগ প্রথম নয়। কিন্তু শুরু থেকেই তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে টালবাহানা করা হয়েছে। আগের অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি। তাই ফের এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে গণ ইস্তফা দিয়ে প্রতিবাদ জারি রাখতে চান তাঁরা।
অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে টিএমসিপির কোনও সম্পর্ক নেই। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী।
১৯৮৫ সালে লোধা সমাজের প্রথম মহিলা হিসেবে স্নাতক হন চুনী কোটাল। কিন্তু স্নাতকোত্তর ডিগ্রি তিনি পাননি। উল্টে জুটেছিল অপমান ও লাঞ্ছনা। এই অপমান ও অসহায়তার কোপে ১৯৯২ সালে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন চুনী কোটাল। এই ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন দশক। সম্প্রতি হায়দরাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে দলিত স্কলার রোহিত ভেমুলার মৃত্যুর ঘটনাতেও উঠেছিল একই অভিযোগ।
Comments are closed.