ঘুষকাণ্ড নিয়ে সিবিআই-এর অন্দরে তীব্র কলহ, প্রধানমন্ত্রীকে ট্যুইটে খোঁচা রাহুলের। দুই সিবিআই শীর্ষ অফিসারকে তলব মোদীর

রবিবারই প্রকাশ্যে এসেছিল দুর্নীতির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে সিবিআই প্রধান অলোক ভর্মা ও তাঁর পরেই সিবিআই-এর দ্বিতীয় শীর্ষ পদাধিকারি রাকেশ আস্থানার দ্বৈরথ, কলহের খবর। এবার সিবিআইয়ের শীর্ষ স্তরে এই কলহ নিয়ে ট্যুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খোঁচা দিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী।
সোমবার সকালে একটি ট্যুইট করেন রাহুল। সেখানে আস্থানার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় পাত্র ও পদাধিকার বলে সিবিআই-এর দুই নম্বর স্থানে থাকা আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে খোদ সিবিআই-এর তরফেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।’ রাহুলের কটাক্ষ, এই প্রধানমন্ত্রীর আমলে সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গুজরাতে সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠিত হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন ১৯৮৪ ব্যাচের এই সিবিআই অফিসার রাকেশ আস্থানা। বরাবরই তিনি মোদীর কাছের লোক বলে পরিচিত। ট্যুইটে এই বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন রাহুল। বিরোধী কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বামেরা বরাবরই অভিযোগ করে এসেছে, নিজের অধীনে থাকা সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, আস্থানাকেই ভবিষ্যতে সিবিআই-এর মাথায় বসানোর পরিকল্পনা ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। কিন্তু তার মাঝেই তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠায়, সেই পরিকল্পনা একদিকে যেমন বাধা পেয়েছে, সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে চলে এসেছে সিবিআই-এর অন্দরের কলহও।
উল্লেখ্য, মইন কুরেশী নামে এক ব্যবসায়ীর নামে গত বছর হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানো ও অর্থ তছরুপের অভিযোগ ওঠে। যার তদন্ত করছে ইডি ও সিবিআই। এই দুর্নীতির তদন্তের সঙ্গে সিবিআই-এর স্পেশাল ডিরেক্টর আস্থানা যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে, যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করেছে খোদ সিবিআই। এই দুর্নীতিতে আর এক অভিযুক্ত সতীশ সানা নামে হায়দারাবাদের এক ব্যবসায়ী তদন্তকারীদের নাকি জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যাতে চার্জশিটে নাম না থাকে তার জন্য তিনি আস্থানাকে ২ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। এই খবর জানতে পেরেই সিবিআই আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর করে।
আস্থানার বিরুদ্ধে যে আরও কিছু দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাও সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশনকে জানায় সিবিআই। এই খবর জানতে পেরেই, গত ১০ অগাস্ট কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিবকে পালটা চিঠি লেখেন আস্থানা। চিঠিতে তাঁর দাবি, সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মা অন্যান্যদের সঙ্গে চক্রান্ত করে তাঁকে ফাঁসাচ্ছেন। আস্থানার পালটা অভিযোগ, তিনি নন, সতীশ সানার থেকে ঘুষ নিয়েছেন অলোক ভর্মা। এতদিন বিষয়টি সিবিআই ও সরকারের অন্দরেই ছিল। সংবাদমাধ্যমে তা প্রকাশ হতেই হাতে নয়া অস্ত্র পেয়ে গেছে বিরোধীরা। আর চাপে পড়ল শাসক বিজেপি, প্রশ্ন উঠছে সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই। সব মিলে সিবিআই-এর দুই শীর্ষ অফিসারের ঘুষ নেওয়া নিয়ে এই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে রীতিমতো চাপে পড়ে গিয়েছে কেন্দ্র।

সোমবার সারাদিন এই বিতর্কের পর সিবিআই-এর অন্দরে দুই শীর্ষ কর্তার তীব্র দ্বন্দ্ব মেটাতে আসরে নামতে হল প্রধানমন্ত্রীকে। সিবিআই-এর স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট মামলা চালু করে খোদ সিবিআই। অন্যদিকে, সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মার বিরুদ্ধেই ঘুষ নেওয়ার পালটা অভিযোগ করেন আস্থানা। এই নিয়ে তুমুল জলঘোলা শুরু হওয়ায় সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মা এবং স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে ডেকে পাঠালেন মোদী।
সোমবারই সিবিআই নিজেদেরই অফিসার দেবেন্দ্র কুমারকে গ্রেফতার করে, যিনি রাকেশ আস্থানার সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তিনি অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে মিথ্যে বয়ান দিয়েছেন বলে সিবিআই-এর অভিযোগ। সিবিআই-এর দুই শীর্ষ কর্তার এই দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের জেরে রীতিমতো চাপে পড়ে যায় কেন্দ্র। যার জেরে দুই শীর্ষ কর্তাকেই তলব করলেন প্রধানমন্ত্রী।

Comments are closed.