আদানি, এসেল, টাটা সহ জার্মানি-ফ্রান্সের একাধিক সংস্থা বিনিয়োগ করতে চায় রেলে! ১০৯ রুটে ট্রেন বেসরকারিকরণের কাজ শুরু

হাওড়া-দিল্লি, হাওড়া-মুম্বই সহ ১০৯ রুটে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। ইতিমধ্যেই বেসরকারি সংস্থাগুলোর আগ্রহ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। আগ্রহীদের সংখ্যার উপর নির্ভর করবে টেন্ডার প্রক্রিয়া। হাওড়া-দিল্লি, হাওড়া-মুম্বই, হাওড়া-চেন্নাই, দিল্লি-মুম্বই সহ ১০৯ টি রুটে ১৫১ টি ট্রেন বেসরকারি হাতে দিতে তৈরি সরকার। গোটা প্রকল্পের বেসরকারিকরণ হলে সরকারের কোষাগারে ঢুকবে ৩০ হাজার কোটি টাকা বা ৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু কোন কোন বেসরকারি সংস্থা রয়েছে এই বরাত পাওয়ার দৌড়ে? কারাই বা সবচেয়ে এগিয়ে?
জানা গিয়েছে, এখানেও এগিয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা। তবে ইকনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম দফার নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য পরিকাঠামো এবং পরিবহণ শিল্পে যুক্ত ২০ টি সংস্থা এ পর্যন্ত নিলামে আগ্রহ দেখিয়েছে। এদের মধ্যে আবার বরাত পাওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে তিনটি ভারতীয় সংস্থা এবং দুটি বিদেশি সংস্থা।

 

আদানি গ্রুপ 

এয়ারপোর্ট থেকে স্থলপথ, খনি থেকে সোলার শিল্প, সব কিছুতেই এ দেশে দ্রুত যে সংস্থা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে, তার নাম আদানি গোষ্ঠী ভারতের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি রেলপথের মালিকানা রয়েছে অদানি গোষ্ঠীর হাতে। ৩০০ কিমি বিস্তৃত এই রেলপথের বন্দর ও ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করছে। তাছাড়া রেল মন্ত্রকের সঙ্গে এবং বিভিন্ন রাজ্যে মেট্রো কর্পোরেশনের কাজ করে আদানি গোষ্ঠী। ২০১৯ সালে এই সংস্থা মেট্রো রেল প্রোজেক্টের উপর নজর রাখার জন্য আলাদা করে সহায়ক সংস্থা রেখেছে।

 

এসেল গ্রুপ 

মিডিয়া ব্যারন সুভাষ চন্দ্র পরিচালিত এসেল গ্রুপ হল আর একটি সংস্থা, যারা ট্রেনের এই বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চলেছে। কয়েক দশক ধরে সরকারের একাধিক নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই সংস্থার। ২০১৮ সালে এই সংস্থার অন্তর্গত এসেল ইনফ্রাপ্রোজেক্টস লিমিটেড প্রথমবার রেল প্রোজেক্টে হাত দেয়।
সেই সময় এসেল গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল IRCON ইন্টারন্যাশনাল, যা ভারতীয় রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি নির্মাণ শিল্প সংস্থা।

 

টাটা রিয়েলটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড 

টাটা গোষ্ঠী এর আগে পুণের হিঞ্জেওয়াড়ি-শিবাজিনগর মেট্রো প্রকল্পের কাজ পেয়েছিল। তাছাড়া দিল্লি-মেরুট রিজিওনাল র‍্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমের বরাত পেতে নিলামে অংশ নেয়। এবার তাদের চোখ রেলের সাম্প্রতিক বেসরকারিকরণের দিকে।

 

বিদেশি সংস্থা 

বোমবর্ডিয়ার (Bombardier) 

এই জার্মান সংস্থাটি প্রথম বিদেশি বহুজাতিক সংস্থা, যারা ৫০ বছর আগে ভারতে সম্পূর্ণ নিজস্ব রেলওয়ে ভেহিকেল উৎপাদনের দক্ষতা প্রতিষ্ঠা করেছে। দিল্লি মেট্রোর কাজে তারা অন্যতম বৃহত্তম লোকোমোটিভ বা রেল ইঞ্জিন সরবরাহকারী। এ পর্যন্ত তারা ৭৭৬ টি মেট্রো কার ডেলিভারি করেছে। গত মে মাসেই দিল্লি-মিরাট মেট্রো প্রকল্পে ২১০টি কমিউটার ও মেট্রো কার তৈরির বরাত জিতেছে।
ভারতীয় রেলের সঙ্গে তাদের পুরনো সম্পর্কের জেরে দেশিয় সংস্থার মাঝেও নিলামে অন্যতম সংস্থা হিসেবে উঠে আসছে এই জার্মানি সংস্থার নাম।

অলস্টম (Alstom) 

এই ফরাসি নির্মাণ সংস্থার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক বহু পুরনো। ভারতের প্রায় ৩,৬০০ কর্মী এই সংস্থায় কাজ করেন। চেন্নাই, কোচি, লখনউ ইত্যাদি একাধিক শহরের মেট্রো প্রকল্পে কাজ করছে ফরাসি সংস্থা। তাছাড়া এ দেশে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য থেকে রেল ইঞ্জিন উৎপাদন করে অলস্টম। এছাড়াও বিহার ও উত্তরপ্রদেশেও এই কোম্পানির দুটি উৎপাদন ইউনিট রয়েছে। তাই বর্তমান কেন্দ্র যে রেলের বড় বেসরকারিকরণের ডাক দিয়েছে সেখানে অন্যতম সংস্থা হিসেবে উঠে আসতে পারে এই ফরাসি সংস্থা।

Comments are closed.