নোটবন্দি থেকে সাভারকারের মতাদর্শ, রাজস্থানের পাঠ্য বই থেকে একাধিক অংশ বাদ দিল কংগ্রেস সরকার

রাজস্থানে ২০১৭ সালে বসুন্ধরা রাজের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার একাধিক বদল এনেছিল স্কুলের পাঠ্য বইয়ে। মোদী সরকারের প্রশস্তি করে একাধিক নতুন অধ্যায় সংযোজন করা হয় ইতিহাস ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানে। অভিযোগ উঠেছিল, ইতিহাসের বিকৃতি করছে বিজেপি সরকার।
২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে রাজনৈতিক পালাবদলের পর রাজস্থানে অশোক গেহলট নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ফের নতুন সংস্করণ আনল পাঠ্য বইয়ে, বাদ পড়ল হিন্দুত্ববাদের স্তুতি করা একাধিক অধ্যায়, বেশ কিছু তথ্যের পুরনো সংস্করণ ফিরিয়ে আনল কংগ্রেস সরকার।
২০১৬ সালে মোদী সরকারের নোটবন্দি, বিনায়ক সাভারকরকে বীর তকমা দেওয়া, হলদিঘাটের যুদ্ধ, ৩৭০ ধারা, সংখ্যালঘু তোষণ, ধর্মান্তকরণ,দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদী সংগঠন ইত্যাদি নিয়ে পূর্বতন বিজেপি সরকার যে নতুন অধ্যায় সংযোজন ও তথ্যের পরিবর্তন করেছিল স্কুলের পাঠ্য বইয়ে, তার কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। কিছু তথ্য সংশোধন করা হয়েছে কংগ্রেস জমানায়।
দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্র বিজ্ঞান বইয়ে দুর্নীতি নিয়ে এক অধ্যায় থেকে বাদ পড়েছে মোদী সরকারের নোটবন্দির সিদ্ধান্তের কথা। পুরনো বইতে লেখা ছিল, মোদী সরকারের নোটবন্দির ‘ঐতিহাসিক’ সিদ্ধান্তে দেশে কালো টাকার যোগান বন্ধ হয়, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরে, বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের টাকা যোগান একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। যা ভারতের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল। এই অধ্যায়টি পুরো বাতিল করা হয়েছে।
দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের ‘ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন’ অধ্যায়ে একটা বিশাল অংশ জুড়ে ছিল হিন্দুবাদী সংগঠন আরএসএসের অন্যতম আদর্শ ‘বীর’ বিনায়ক দামোদার সাভারকারকের রাজনৈতিক আন্দোলন ও মতাদর্শ, তাকে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে নতুন বইয়ে।
আকবর ও মহারানা প্রতাপের হলদিঘাটের যুদ্ধকে ধর্মীয় যুদ্ধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বিজেপি সরকারের আমলে ইতিহাস বইয়ে। নতুন সংস্করণে হলদিঘাটের যুদ্ধকে ধর্মীয় নয়, রাজনীতির প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতা ঠেকাতে ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, তাই সারা দেশে হিন্দিকে যোগাযোগের ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে, এমনই লেখা হয়েছিল আগের স্কুল পাঠ্যে। এই পুরো অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে নতুন বই থেকে।
যদিও, দশম শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞানের বইয়ের ‘ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ অধ্যায়ে এখনও জ্বলজ্বল করছে, শুধুমাত্র ধনী, বুদ্ধিজীবী, উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যাঁদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনও সংযোগ ছিল না, তাঁরাই ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা। মজার ব্যাপার, গেহলাট সরকার এই অংশটির কোনও পরিবর্তন করেনি।

Comments are closed.