এনডিটিভির রবীশ কুমারকে রামন ম্যাগসায়সাই, নির্ভীক সাংবাদিকতার ধারাবাহিক যোদ্ধাকে স্বীকৃতি

তাঁর সাংবাদিকতা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টুডিওয় আবদ্ধ নয়। তাঁর অনুষ্ঠানে চিৎকার, গলাবাজির ঠাঁই নেই। কথা হয় যুক্তির উত্তরে প্রতিযুক্তির। তাঁর অনুষ্ঠান নির্বাকের মুখের কথা বলে, প্রাইম টাইমে, দর্শক ধরতে বাকি নিউজ চ্যানেলের ইঁদুর দৌড়ে তিনি একমাত্র ব্যতিক্রম। তিনি রবীশ কুমার। এবারের রামন ম্যাগসায়সাই পুরস্কার বিজেতা।

সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেশের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি তুলে ধরাই হোক, কিংবা মোদী সরকারের বিরোধিতা, এনডিটিভির রবীশ কুমার অবিচল। ধারাবাহিকভাবে সেই নির্ভীক সাংবাদিকতার পুরস্কার হিসেবে রবীশ কুমার সম্মানিত হলেন ‘রামন ম্যাগসায়সাই’ পুরস্কারে। শুক্রবার রামন ম্যাগসায়সাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে রবীশ কুমারের নাম ঘোষণা করা হয়। আগামী ৯ ই সেপ্টেম্বর ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেওয়া হবে।
এনডিটিভিতে তাঁর ‘প্রাইম টাইম’ অনুষ্ঠানে দেশের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে রবীশ কুমারের সুক্ষ্ম বিশ্লেষণ ও আলোচনার ভূয়সী প্রশংসা করেছে রামন ম্যাগসায়সাই ফাউন্ডেশন। সংস্থার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, যখন কোনও সাংবাদিক সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা হয়ে ওঠেন তখনই তিনি প্রকৃত সাংবাদিক। আর রবীশ কুমার বরাবর তাঁর সাংবাদিকতায় মানুষের সমস্যা, তাদের অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর সাংবাদিকতার ধরণের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছে রামন ম্যাগসায়সাই ফাউন্ডেশন। বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে ভারত যে সব সাহসী ও দায়িত্ববান সাংবাদিক দেখেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম রবীশ কুমার। ট্রোল, ভুয়ো খবর যে যুগে জাঁকিয়ে বসেছে সেখানে সাংবাদিক হিসেবে রবীশ কুমারের কৃতিত্ব প্রশংসনীয়, ম্যাগসায়সাই ফাউন্ডেশনের তরফে বলা হয়।
সমাজে বিশেষ অবদান, সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের পাশে থাকা, দেশের গণতন্ত্র ও অখণ্ডতা রক্ষায় যাঁরা বিশেষ ভূমিকা নেন তাঁদের সম্মান জানাতে ১৯৫৭ সাল থেকে রামন ম্যাগসায়সাই পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে রবীশ কুমারের পাশাপাশি এশিয়ার ‘নোবেল’ বলে পরিচিত এই পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন আরও চার জন। তাঁরা হলেন, মায়ানমারের সাংবাদিক কো সুয়ে, থাইল্যান্ডের সমাজকর্মী অংখানা নীলাপাইজিৎ, ফিলিপিন্সের সংগীত শিল্পী রেমুন্ডো পুজান্তে সায়াবায়াব ও দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজকর্মী কিম জং কি। এর আগে ভারত থেকে এই পুরস্কার পেয়েছেন মাদার টেরেজা, সত্যজিৎ রায়, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, শম্ভু মিত্র, গৌরকিশোর ঘোষ, পি সাইনাথ, অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রমুখ।
বিহারের জিতওয়ারপুরের রবীশ কুমার, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৯৬ সাল থেকেই তিনি এনডিটিভির সঙ্গে। যে কোনও বিষয়ে তাঁর রসবোধ, সূক্ষ্ম বিশ্লেষণী ক্ষমতা, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে সরকারি নীতির কঠোর বিরোধিতা, দেশের মূল সমস্যাগুলিকে জনমানসে আনার ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। রামন ম্যাগসায়সাই কর্তৃপক্ষের তরফে রবীশ কুমারের নাম ঘোষণার পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশিষ্টরা।

Comments are closed.