এখনও বাকি আরও ৩ দফার ভোট। মসনদে বসবেন কে, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। কিন্তু ভোটে যেই জিতুন, নতুন সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবে, তেলের দামে বিশাল লাফ। পরিস্থিতি এমনই যে, নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেই বাধ্য হতে পারে তেলের দাম বাড়াতে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
লোকসভা ভোট শুরু হয়েছে ১১ ই এপ্রিল, চলবে ২৩ শে মে পর্যন্ত। এই গোটা নির্বাচন পর্ব জুড়ে দেশে স্থির হয়ে রয়েছে তেলের দাম। উল্টোদিকে বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। ভোট চলায়, তার সরাসরি প্রভাব এখনও ভারতবাসীর পকেটে না পড়লেও, ভোট মিটতেই সেই বোঝা চাপবে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে, আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের। বিশ্বের বাজারে তেলের দাম বাড়ার অর্থ, টাকার দামে আরও পতন এবং অবশ্যম্ভাবী মুদ্রাস্ফিতি।
২০১৭ সালের জুন মাস থেকে ভারতে রোজ তেলের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এর ফলে প্রতিদিনই তেল সংস্থাগুলো বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে পরিশোধিত তেলের দাম নির্ধারণ করছে।
গত বছর অক্টোবরে যখন বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারে পৌঁছেছিল, তেল সংস্থাগুলো লিটারে ১০ টাকা পর্যন্ত পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছিল। এমন লাগামছাড়া দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদের মুখে পড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। বাধ্য হয়ে কর ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এবার কী করবে নতুন সরকার, এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
আমেরিকা-ইরান চাপানউতোর যত বাড়ছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে তেলের দামে। তেহরানের তেলের একটি বড় অংশের ক্রেতা ভারত। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে অশান্তির আবহে, ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া নজর রয়েছে ভারতের উপর। ইরানের তেল কেনা বন্ধ করতে হলে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে ভারতের মত দেশে। ডলারের তুলনায় আরও পড়তে পারে টাকার দাম।
তেল সংস্থাগুলো অবশ্য বর্তমানে তেলের দামের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নেপথ্য কাহিনী নিয়ে মুখে কুলুপ। এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে, মোদী সরকারের চাপের কাছে মাথানত করেই কি তারা সাময়িক স্থিতাবস্থার রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে? সরকারি তরফে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিরোধীরা অবশ্য এনিয়ে মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা অখিলেশ প্রতাপ সিংহের মতে, ভোটবাক্সে ডিভিডেন্ডের লক্ষ্যে মোদী সরকার নিজের তৈরি করা নিয়মই ভাঙছে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল, সাধারণ মানুষের উপর বোঝা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি।
সরাসরি মোদী সরকারের দিকে আঙুল না তুললেও, কর্ণাটকে বিধানসভা ভোটের কথা মনে করিয়ে দুই পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা টানছেন অল ইন্ডিয়া পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ নীতিন গোয়েল। তাঁর বক্তব্য, কর্ণাটকে ভোটের সময়ও একটানা ১৯ দিন তেলের দাম এক রেখে দেওয়া হয়েছিল। যার প্রভাব পরবর্তীতে ক্রেতার উপর এসে পড়ে, যখন এক ধাক্কায় অনেকটাই দাম বাড়ে পেট্রোল-ডিজেলের।
Comments are closed.