ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’ খোঁজাই তাদের কাজ। আর খুঁজে পেলেই সেই দেশদ্রোহীদের জেলের চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছে না দেওয়া অবধি স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় না ‘ক্লিন দ্য নেশন’ সংক্ষেপে সিটিএন। এবার সোশ্যাল মিডিয়ার এই হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীকে সাংবাদিকতায় নারদ সম্মানে ভূষিত করল আরএসএসের ইন্দ্রপ্রস্থ বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্র। শনিবার দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ফেসবুক গ্রুপ ‘ক্লিন দ্য নেশন’কে পুরস্কৃত করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং আরএসএসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনমোহন বৈদ্য। যদিও প্রশ্ন উঠছে, সাংবাদিকতার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের কী সম্পর্ক?
পুলওয়ামা-বালাকোট পর্বের সময় গুয়াহাটির এক অধ্যাপক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। সেই পোস্টে দেশ বিরোধিতার গন্ধ পেয়েছিল সিটিএন। এরপর সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই অধ্যাপককে সাসপেন্ড করে। একই ঘটনা রাজস্থানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও। একইভাবে ৪ জন কাশ্মীরি পড়ুয়াকে দেশবিরোধী পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে সাসপেন্ড করে। ট্যুইটারে তথাকথিত ভারত বিরোধী পোস্ট দিয়ে জয়পুর থেকে গ্রেফতার হয়েছেন এক তরুণ। গ্রেটার নয়ডায় একই অভিযোগে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড করে এক কাশ্মীরি পড়ুয়াকে। একই বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গ্রেফতার হন বিহারের কাটিহারের কলেজ পড়ুয়া। সিটিএনের দাবি, এই সমস্ত গ্রেফতার কিংবা সাসপেন্ড করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তাদেরই তৎপরতায়। এবার সেই গোয়েন্দাগিরিরই পুরস্কার পেলেন তাঁরা, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। যদিও একটি মামলাও এগোয়নি।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামা পর্বে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হেনস্থার মুখে পড়েছিলেন কাশ্মীরি মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল এই গ্রুপের বিরুদ্ধে। একাধিকবার সেই গ্রুপটিকে বন্ধও করে দেয় ফেসবুক ও ট্যুইটার।
সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নারদ সম্মান দেয় আরএসএসের ইন্দ্রপ্রস্থ বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্র। সংস্থার সচিব বাগিশ ইশোর জানিয়েছেন, এই গ্রুপটির দেশের প্রতি ভালোবাসা দেখে আমরা মুগ্ধ। অনেকেই দেশকে ভালোবাসেন, কিন্তু কিছু মানুষ সেই ভালোবাসার প্রতিদান দেন, এই গ্রুপটি তেমনই।
এবছর ১৪ ই ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ের উপর আত্মঘাতী জঙ্গি হানার ঘটনা ঘটে। তার ঠিক পরদিন, ফেসবুকে যাত্রা শুরু করে ক্লিন দ্য নেশন বা সিটিএন। দুদিনের মধ্যেই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৪৫০০ ছাড়িয়ে যায় বলে দাবি তাদের। মূলত দিল্লি এবং নয়ডা এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত তরুণরাই এই গ্রুপটি তৈরি করেছেন। নেটিজেনদের একাংশের অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির হয়ে প্রচার চালায় এই গ্রুপ। কোনও মন্তব্যে আপত্তি থাকলেই, তাকে অ্যান্টি ন্যাশনাল বলে দেগে দিয়ে শুরু হয় লাগাতার ট্রোলিং। যদিও পুরষ্কার প্রদানকারীরা তা মানতে নারাজ। ফেব্রুয়ারিতে গ্রুপের একেবারে শুরুর দিকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল সিটিএন। সেখানে গ্রুপের অন্যতম সদস্য মধুর সিংহ দাবি করেছিলেন, এখন ফেসবুকের ডিপি বদলানো আর মোমবাতি মিছিল করার সময় নয়। খুঁজে বের করতেই হবে সেই মানুষগুলোকে, যাঁরা আমাদের বীর সেনাদের বলিদান দেখে হাসছেন। তারপর তাঁরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, সেখানে যাওয়া হবে এবং কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের বরখাস্ত করার আবেদন জানানো হবে। যাঁরা চাকরি করেন, কর্মস্থলে গিয়ে তাঁদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এবং সর্বোপরি পুলিশকে তাঁদের গ্রেফতার করতে বাধ্য করতে হবে। এভাবেই তাঁদের বোঝানো হবে কত ধানে, কত চাল।
গ্রুপের তরফে জানানো হয়েছে, এভাবে প্রায় ৪৫ টি ঘটনায় আমরা সফল হয়েছি। নারদ পুরস্কার ভবিষ্যতে আরও অ্যান্টি ন্যাশনাল ধরতে আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। আর বিরোধীরা বলছেন, বিরুদ্ধ মত দমন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা নেওয়ার জন্যই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তাদের।
Comments are closed.