খবরের শিরোনামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির হিন্দু বিদ্যালয় স্কুল। স্কুলের পরিচালন সমিতি স্কুলের মধ্যে অস্ত্র প্রশিক্ষণ চালু করার জন্য প্রধান শিক্ষকের উপর নিয়মিত চাপ সৃষ্টি করছে । বিরোধিতা করায় প্রকাশ্যে হেনস্থা করা হয়েছে প্রধান শিক্ষককে। মারধরের হুমকিও তিনি পাচ্ছেন। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রধান শিক্ষককে না জানিয়েই এই স্কুলে আরএসএস অস্ত্র প্রশিক্ষণের শিবির বসিয়েছে। এবারে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবিরে বাধা পেয়ে আরএসএস সরাসরি প্রধান শিক্ষককে আক্রমণের ছক কষছে।
কুলতলির স্কুলে অস্ত্র প্রশিক্ষণের মতন এই ভয়ঙ্কর ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে ভুল হবে। রাজ্যজুড়ে অসহিষ্ণুতার আবহাওয়া তীব্র করার ছক কষেছে আরএসএস-বিজেপি । রাজ্যজুড়ে অরাজকতা ও অশান্তির আবহাওয়া তৈরি করতে চেষ্টার কোনো কসুর করছে না আরএসএস। স্কুলে স্কুলে অস্ত্র প্রশিক্ষণের নামে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার মারাত্মক প্রবণতা (সম্প্রীতির) বাংলায় এর আগে কখনো দেখা যায়নি। আসলে রাজ্যজুড়ে ধর্মের নামে হানাহানি , রক্তপাত , অশান্তি করতে না পারলে আরএসএস-বিজেপির পায়ের তলায় মাটি পাওয়া দুঃসাধ্য।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার উন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলোকে কোনও রাজনৈতিক জবাব দিতে না পেরে আরএসএস-বিজেপি ধর্মীয় উন্মাদনার আর হিংসার রাস্তাতেই হাঁটতে চাইছে। এই প্রক্রিয়া অবশ্য নতুন নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরএসএসের স্কুলগুলি শুধু অস্ত্র প্রশিক্ষণের আখরা নয়; সেখানে বিকৃত ও ভুল ইতিহাস পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করাটা আরএসএসের মজ্জাগত। ইতিহাসের বিকৃতি, ধর্মীয় জিগির তৈরি করা, অস্ত্র প্রশিক্ষণের নামে ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া – আরএসএসের বৃহত্তর ষড়যন্ত্রর একটা অংশ।
বাংলার মাটিতে ধারাবাহিকভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র চলছে । ইতিমধ্যেই কোবরা স্টিং অপারেশনে প্রকাশিত হয়েছে, কীভাবে এই সরকারকে ফেলে দেওয়া ও রাজ্যজুড়ে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র তৈরি করেছেন দৈনিক জাগরণের ঝাড়খণ্ডের এরিয়া ম্যানেজার। প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ড থেকে বিপুল পরিমাণে সশস্ত্র দুষ্কৃতী এনে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে বানচাল করার ছক কষছে আরএসএস-বিজেপি ।
প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে বাংলা কেন আরএসএসের লক্ষ্য হয়ে উঠল। আসলে মোদি সরকারের যে কোনো জনবিরোধী পদক্ষেপের সব থেকে ধারাবাহিক বিরোধিতা যিনি করে এসেছেন তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে গোটা দেশে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের ঐক্যবদ্ধ মেজাজ। তাই যেনতেন প্রকারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খতম করাটাই আরএসএসের অন্যতম অ্যাজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নানা ধরণের ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে বোনা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ কালো টাকা বাংলার গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি সাম্প্রদায়িক এই রাজনীতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে সিপিএম। ঘটনাচক্রে যে কুলতলির স্কুলে এত বড় ঘটনা ঘটলো সেখানকার নির্বাচিত বিধায়ক সিপিআইএমেরই।
বাংলা ও দেশ বাঁচানোর এই লড়াইয়ে পক্ষ নিতেই হবে। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, বহমান উদার ধর্ম নিরপেক্ষ ঐতিহ্য আজ চ্যালেঞ্জের মুখে। আরএসএসের হানাহানি ভাগাভাগির জিগিরের বিরুদ্ধে বাংলার উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
“ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ, দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরন! ” – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাংলার মুখ। আরএসএস- বিজেপির হানাহানি-কাটাকাটি-ভাগাভাগি রাজনীতির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করাটা ইতিহাসের দায়িত্ব। আসুন আমরা সেই দায়িত্ব পালন করি।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত।)