সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ২০১৮ এর প্রাপক হিসেবে নাম ঘোষণার পর কাটল না ২৪ ঘণ্টাও। পুরস্কার নিতে নিজের অপারগতার কথা জানিয়ে দিলেন কর্ণাটকের নাট্যকার, অভিনেতা, কবি তথা থিয়েটার কর্মী এস রঘুনন্দন। দেশে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা অসহিষ্ণুতা, গণপিটুনির ঘটনা, প্রান্তিক মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সমাজকর্মীদের উপর রাষ্ট্রীয় অত্যাচার নামিয়ে আনার কারণ দেখিয়ে পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছেন এই বর্ষীয়ান থিয়েটার কর্মী।
একটি বিবৃতিতে এস রঘুনন্দন লিখেছেন, এখন ভগবান এবং ধর্মের নামে যে কাউকে ধরে দল বেঁধে পিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী কে কী খাবে, তা নিয়েও দখলদারির ঘটনা চোখে পড়ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতায় সমাজে ভিন্ন বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে। যে বার্তার সঙ্গে আমি সহমত নই। সাম্প্রতিক ভারতে হত্যা ও হিংসার রাজনীতির রমরমার তীব্র বিরোধিতা করে বর্ষীয়ান অভিনেতা তথা পরিচালকের আক্ষেপ, দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউ তো এনিয়ে মুখ খুলছেন না। এস রঘুনন্দনের অভিযোগ, ইন্টারনেটকে অত্যন্ত কৌশলে এমন হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে কানহাইয়া কুমারের উদাহরণ দিয়ে কবি তথা নাট্যকারের অভিযোগ, দেশের যে কোনও প্রান্তে বিদ্বজ্জন কিংবা সমাজকর্মীরা যখনই গরিব এবং নিপীড়িত মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছেন, সরকার থেকে তাঁদের দেশদ্রোহী বলে দেগে দিয়ে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন বা ইউএপিএতে অভিযুক্ত করে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে। জেলবন্দি সেই মানুষরা সামান্য আইনি সহায়তাটুকুও পাচ্ছেন না। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অপরাধে দিনের পর দিন তাঁদের জেলে পচতে হচ্ছে। কোনও নির্দিষ্ট সরকারের নাম না নিয়ে বিবৃতিতে অভিনেতা এস রঘুনন্দন লিখেছেন, আমাদের শাসকরা যেন ঠিক করেই নিয়েছেন, গরিব ও প্রান্তিক মানুষদের চুপ করানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল, তাদের পাশে দাঁড়ানো বিদ্বজ্জন এবং সমাজকর্মীদের গুরুতর অভিযোগে জেলে ঢোকানো।
বসুধৈব কুটুম্বকমের আদর্শে গড়ে তোলা দেশে যখন শাসকের তরফে এমন অনায়াস অবিচার চলতে থাকে, সেই সময় একজন থিয়েটার কর্মী, কবি এবং নাট্যকার হিসেবে এই সম্মান গ্রহণ করতে পারি না, বিবৃতিতে জানিয়েছেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এস রঘুনন্দন। কোনও বিরোধিতা কিংবা প্রতিবাদের জন্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান নয়, বরং আমি অসহায়ভাবে কেবল জানাতে চাই, এই পুরস্কার নিতে আমি অপারগ, বিবৃতিতে জানিয়েছেন এস রঘুনন্দন।
Comments are closed.