FB-তে গেম খেলেই মাসে রোজগার লাখ টাকা, ‘অন্যরকম’ পেশার সন্ধান দিচ্ছেন সালকিয়ার সৌম্যদীপ   

হাতে স্মার্ট ফোন আসার পরে গেমিং-এর দুনিয়ায় বিপ্লব এসেছে। ৮ থেকে ৮০ অনেকেই মজে মোবাইল, কম্পিউটার গেমে। কিন্তু গেম খেলে যদি রোজগার করা যায়? আর সেই রোজগারটা যদি মাসে প্রায় লাখ টাকা হয়? শুনে কিচ্ছুক্ষণের জন্য চোখ কপালে উঠলেও হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা সৌম্যদীপ  চৌধুরী তেমনই এক অবাক কাণ্ড ঘটিয়েছেন। শুধু মাত্র গেম খেলেই তিনি মাসে প্রায় লাখ টাকা রোজগার করছেন। তাজপুরে ছুটি কাটাতে গিয়ে নিজের এই ‘অন্যরকম’ পেশা নিয়ে কথা বললেন The Bengal Story’-এর সঙ্গে। 

সৌমদীপ জানালেন, সিঙ্গাপুর থেকে হোটেল ম্যানেজম্যান্টের পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে তেমন পছন্দের চাকরি পাচ্ছিলেন না। একটি বহুজাতিক সংস্থায় কিছু সময় চাকরি করেন। পরে নিজেরই একটি ‘জব কনসালটেন্সি’ ফার্ম খোলেন। মূলত বিভিন্ন দেশের হোটেলে কাজের জন্য লোক জোগাড় করে দেওয়ার ছিল সৌমদীপের কাজ। ফার্ম ভালোই চলছিল, কিন্তু বাধ সাধল করোনা। হঠাৎ লকডাউনে কার্যত বেকার হয়ে পড়লেন সৌমদীপ। তখনই ঠিক করলেন ছোটবেলার নেশা গেমিংকেই পেশা করবেন । তাঁর কথায়, “লকডাউনে সবাই ঘরে বসে গেল, আর আমি ওই সময়টাকে কাজ লাগালাম”। 

২০২০-এর মে-জুন মাস নাগাদ পেশা হিসেবে গেম খেলা শুরু করলেন। সৌম্যদীপ জানালেন, “ শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। প্রায় তিন চার মাস আমার গেমের ভিডিওগুলো এক থেকে দু’জন দেখত।” ভিউয়ার্স কম হলেও হতাশ হয়ে থেমে যাননি সৌম্যদীপ। দিনে প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিমিং-এ গেম খেলতেন। ২০২০-এরই সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ ফেসবুকের তরফে সৌম্যদীপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বললেন, “ওই ঘটনাটায় বেশ কিছুটা উৎসাহ পেয়েছিলাম। প্রথম মনে হল আমার কাজটা একটা সম্মান পেল। তবে ফেসবুকের গেমিং পার্টনার হলেও প্রথম দিকে কোনও টাকা পেতাম না।” এখন আপনার গেমের ভিডিওতে দর্শক সংখ্যা কত? বললেন, “ ১, ২ জন ভিউয়ার্স থেকে যেটা শুরু করেছিলাম, এখন আমার প্রত্যেকটি ভিডিও-তে প্রায় ১-৬ লাখ মতো ভিউ হয়”। শুধু ফেসবুক থেকেই বর্তমানে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা মতো রোজগার করেন, জানালেন সৌম্যদীপ। 

সৌম্যদীপেরও ছোটোবেলা কেটেছে আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলের মতো। জানালেন, সালকিয়ার বনফুল বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেছেন। এরপর সালকিয়ারই মাতৃভবন থেকে মাধ্যমিক এবং বালির জোড়া অশ্বথতলা বিদ্যালয় থেকে কমার্স নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। 

আপনার মতো অনেকেই তো নিজের ভালোলাগাকে পেশা করতে চান। তাঁদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন? “দেখুন অনেকেই কিন্তু গেম খেলতে ভালোবাসেন, এটার জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করেন। কিন্তু গেম খেলে কীভাবে রোজগার করা যায়, সেটা আমাদের দেশে অনেকেই এখনও জানেন না”। সেই সঙ্গে সৌম্যদীপের সংযোজন, আমি গেম খেলতে ভালোবাসি কিন্তু গেমিং-এ আসক্ত নই। অন্যদেরও বলব এডিক্টেড হবেন না। 

বর্তমানে শুধু গেম খেলার রোজগারে ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। সৌম্যদীপের কথায়, “ দেখুন ছোটো বেলা থেকেই ভবিষৎ-এ কী করবো তা নিয়ে চিন্তা করিনি, কিন্তু একটা কথা ঠিক করেছিলাম আর যাই করি চাকরি করবো না। স্বাধীন থেকেই যা করার করব”।         

  

 

Comments are closed.