বড় রাস্তার সামনেই এক চিলতে ঘর। অনবরত গাড়ির হর্ণে দাঁড়িয়ে থাকাই দুষ্কর। তার মধ্যেই একমনে বাবার সঙ্গে ‘দুর্গা’ গড়ার কাজ করছেন ক্লাস ইলেভেনের দুর্গা।
স্কুলের খাতায় নবনীতা ধর লেখা থাকলেও প্রতিমা শিল্পী বাবা মেয়ের নাম রেখেছেন দুর্গা। সেই থেকেই পরিচিতরা সকলেই তাঁকে দুর্গা বলেই চেনেন। লকডাউনে বাবার কাজ বন্ধ থাকায় মাঝ পথেই থেমে গিয়েছিল পড়াশোনা। পুজোয় বাবা কিছু ঠাকুরের বরাত পাওয়ায় ফের ইলেভেনে ভর্তি হতে পড়েছেন দুর্গা। সেই সঙ্গে রাত দিন বাবার সঙ্গে হাত লাগিয়েছেন মূর্তি গড়ার কাজে। শেষ মুহূর্তের কাজ সারতে সারতে দুর্গা কথা বললেন TheBengalStory এর সঙ্গে।
কবে থেকে এই কাজ করছেন? ছোটো বেলা থেকেই বাবাকে দেখে আমারও বড্ড ইচ্ছে করতো ঠাকুর বানাতে। তখন খেলার ছলেই বাবার সঙ্গে ঠাকুর বানানোর কাজ করতাম। সেই খেলাই গত দু’বছরে এভাবে কাজে লেগে যাবে বুঝতে পারিনি। হেঁসে বললেন দুর্গা।
আসলে আগে সাহায্যের জন্য একজন ছিলেন। তবে লকডাউনে বাবারই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই আর লোক রাখতে পারেনি। ছোটো থেকে আঁকা শিখেছি। সেটাও কাজে লেগে গেলো। মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে আপনি কী কী কাজ পারেন? দুর্গার পাশে বসে ছিলেন ইন্দ্রজিৎ বাবু। ও এখন মোটামুটি সব কাজ পারে, সামনের বছরের মধ্যে ‘মায়ের’ চোখ আঁকাটাও শিখে ফেলবে। গর্বের ছোঁয়া ইন্দ্রজিৎ বাবুর গলায়।
শুনলাম লকডাউনে খুব সমস্যায় পড়েছিলেন। হুঁ, করোনায় প্রায় সব ছোটো পুজোই তো বন্ধ গিয়েছিল। বাবার হাতে একটাও কাজ ছিল না। ওনার শরীরও খারাপ হয়েছিল। সব মিলিয়ে এমন একটা কঠিন সময় শুরু হল। পড়াশোনা ছাড়তে হল আমায়। তারপরেই একগাল হেসে দুর্গা জানালেন, তবে এবারে ঠাকুরের বরাত পাওয়া বাবা বললেন আবার পড়াশোনা শুরু করতে। স্কুলে ভর্তি হলাম। মা দুর্গাই আমায় আবার স্কুলে ফেরাল। উক্তি দুর্গার।
এই কদিন রাতদিন জেগে বাবার সঙ্গে ঠাকুর গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন দুর্গা। জানালেন, এখন তো পড়ার চাপ অনেকটাই কম, তাই সামলে নিতে অসুবিধা হয়নি।
আর্টসের ছাত্রী দুর্গা। ভবিষৎ-এ কী ইচ্ছে আছে? আমি তো চাই আর্ট কলেজে পড়তে। তবে শুনেছি অনেক খরচ, দেখি কী হয়। পুজোর কোটা দিন কী করেন? এখন আর তেমন ঠাকুর দেখতে বেরোনো হয় না। আসলে কদিন কাজ করতে গিয়ে এত রাতে জাগা হয়। তাই চারটেন দিন বিশ্রামই নি। তবে ভালো প্যান্ডেলগুলো দিনের বেলা দেখে আসি।
পুজোর প্ল্যানের কথা বলতে গিয়েই দুর্গার উক্তি, আসলে এক মাস ‘মায়ের’ সঙ্গে এতটা জড়িয়ে পড়ি, পঞ্চমীতে যখন সব ঠাকুর চলে যায়, খুব ‘ফাঁকা’ লাগে জানেন। ওই দিনটাই যেন আমার কাছে দশমী। মন খারাপের হাঁসি দুর্গার মুখে।
Comments are closed.