ইসরোতে কাজ পাওয়া লাদাখের প্রথম ইঞ্জিনিয়ার সেরিং তাশি গ্রামের দুঃস্থ ছেলে-মেয়েদের দিচ্ছেন উচ্চশিক্ষার পাঠ
লাদাখের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা সেরিং তাশি। প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াতের জন্য ছোট্ট তাশিকে হাঁটতে হোত ১২ কিলোমিটার। সেই তাশিই লাদাখে জন্মগ্রহণ করা প্রথম ব্যক্তি, যিনি বিজ্ঞানী হিসেবে ইসরোতে কাজ করছেন। গ্রামের বাসিন্দা হওয়ার দরুণ তিনি অনুভব করেছিলেন, মেধা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে পারিবারিক আর্থিক অনটন বা সামাজিক কারণে বহু পড়ুয়া নিজের লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারে না। সেই ভাবনা থেকেই বিজ্ঞানী তাশি তৈরি করেন লাদাখ সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এলএসএফ)। যার সাহায্যে ৭০০ র বেশি গ্রামীণ দুঃস্থ পড়ুয়া এখন দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন।
লাদাখের মাথো নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম সেরিং তাশির। বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর জওয়ান আর মা গৃহকর্ত্রী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়ার পর বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এক সরকারি স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন সেরিং। এরপর জম্মুর গভর্নমেন্ট কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন। পাশাপাশি, কম্পিউটার সায়েন্সেও ডিপ্লোমা করেন তিনি। এরপর তাশি কাজ করেছেন লাদাখ রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভলপমেন্ট, ইন্ডিয়ান এস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরিতে। তবে ২০০২ সালে তাঁর স্বপ্নপূরণ হয়। সে বছর ইসরোর বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিযুক্ত হন সেরিং তাশি।
তাঁর কথায়, নাম শুনলেও ইসরো সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাইনাল ইয়ারে এসে তিনি ইসরো সম্পর্কে জানতে পারেন। তারপর থেকেই ইসরোতে যোগ দেওয়াকেই পাখির চোখ করে এগিয়েছেন। সেরিং তাশি মনে করেন, ইচ্ছাশক্তি আর জেদ থাকলে নিজের স্বপ্নপূরণ করা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু তার জন্য যথাযথ সুযোগ পাওয়াটাও জরুরি। তাঁর মতো প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা বা পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে অনেক সময়ই যে তা লক্ষ্যপূরণে বাধ সাধে, সে কথা জানেন বিজ্ঞানী তাশি। তিনি জানেন, পারিবারিক অর্থাভাবে অনেক মেধাবী পড়ুয়া স্কুলছুট হয়। এই ভাবনা থেকেই যে বছর ইসরোর বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ শুরু করেন, সেই ২০০২ সালেই তৈরি করেন কোচিং সেন্টার। গ্রামের দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে কোচিংয়ের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারির মতো কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করেন সেরিং তাশি। তবে তাঁর তৈরি লাদাখ সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এলএসএফ) শুধু আইআইটি-জেইই বা এনইইটির মতো কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য পড়ুয়াদের তৈরি করে না, দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কলারশিপ পেতে পারে, তার বন্দোবস্ত করে বিজ্ঞানী সেরিং তাশির সেবামূলক প্রতিষ্ঠান এলএসএফ। ২০১৯ সালের মে মাসে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি স্বীকৃতি পেলেও, এর সফর শুরু হয় ২০০২ সালে। ২০ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে শুরু করা কোচিং সেন্টারের বর্তমান পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ৩৫০। আর বিজ্ঞানী তাশির কোচিংয়ের পড়ুয়াদের সাফল্যের হার ৮০ শতাংশ। বিভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার পাশাপাশি, স্কুলে স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের বিজ্ঞান বিষয়ে উৎসাহিত করা, কেরিয়ার কাউন্সেলিং, পড়ুয়াদের প্লেসমেন্টেও সাহায্য করে লাদাখ সায়েন্স ফাউন্ডেশন। এখন শুধু লাদাখ নয়, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালরু, পুণে, দার্জিলিঙের মতো শহরেও এখন লাদাখ সায়েন্স ফাইন্ডেশনের স্বেসচ্ছাসেবী শিক্ষকরা কাজ করছেন।
Comments are closed.