কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআরের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আতুঁড়ঘর শাহিন বাগ আন্দোলনকে দিল্লির নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম ইস্যু করেছিল বিজেপি। উঠতে বসতে শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের গালিগালাজ করেছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। অথচ সেখানকার বিধানসভা কেন্দ্র ওখলায় আপ প্রার্থী আমানাতুল্লাহ খানের কাছে একেবারে পর্যদুস্ত হলেন বিজেপির ব্রহ্ম সিংহ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, শাহিন বাগের রাগের ‘কারেন্ট’ যেন বিজেপির ভোটবাক্সে পড়ে। এমনকী শাহিন বাগ আন্দোলনকে মদত দেওয়ার অভিযোগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলেও দেগেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা। যদিও ভোটে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ল না।
মঙ্গলবার প্রতি রাউন্ডে গণনা শেষ হতেই দেখা যায়, বিজেপি প্রার্থী ব্রহ্ম সিংহর সঙ্গে আপ প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ভোট গণনার প্রতি রাউন্ড শেষে নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে কত ভোটে এগোলেন তার একের পর এক তথ্য পোস্ট করতে থাকেন আমানাতুল্লাহ। ২০১৫ সালের ভোটেও এই ওখলা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রহ্ম সিংহকে ৬৪ হাজার ৫৩২ ভোটে হারিয়েছিলেন আপের আমানাতুল্লাহ খান। এক সময় কংগ্রেসের অভেদ্য দুর্গ বলে পরিচিত এই কেন্দ্রে গত বিধানসভা ভোটে দু’বারের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মহম্মদ খান পেয়েছিলেন মাত্র ২০ হাজার ১৩৫ টি ভোট। কিন্তু গতবারের মতো এ বারেও সেই দুর্গে ফাটল ধরিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলেন আপ প্রার্থী।
ভোটের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে শাহিন বাগ আন্দোলনের কথা উঠে আসছে। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, শাহিন বাগ আন্দোলনকারীদের বিজেপির ক্রমাগত কটাক্ষ, বিদ্বেষমূলক আচরণের প্রভাব পড়েছে ভোট বাক্সে। গত ৮ ফেব্রয়ারি দিল্লি বিধানসভা ভোটের মাত্র দু’দিন আগে বিজেপি সাংসদ গিরিরাজ সিংহ শাহিন বাগকে ‘মানব বোমার আতুঁড়ঘর’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। পূর্ব দিল্লির বিজেপি সাংসদ পরবেশ ভার্মার মন্তব্য ছিল, শাহিন বাগের আন্দোলনকারীরা ঘরে ঢুকে মা-বোনদের ধর্ষণও করতে পারে। যেমনটা ‘৯০ সালে উপত্যকায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর করেছিল সন্ত্রাসবাদীরা। পরবেশের আরও হুমকি ছিল, ১১ তারিখে দিল্লিতে বিজেপি জেতার পর ওই আন্দোলনকারীদের তুলে দিতে এক ঘণ্টাও সময় লাগবে না। দিল্লির বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র বলেছিলেন, শাহিন বাগে পাকিস্তানিরা আস্তানা গেড়েছে। দিল্লির হরিনগর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তেজিন্দর পাল সিংহ বগগা ঘোষণা করেন, ১১ ফেব্রুয়ারি শাহিন বাগকে আর একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মুখোমুখি হতে হবে। ক্রমাগত আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের এই সব মন্তব্যই বুমেরাং হয়ে ফিরেছে বিজেপির দিকে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ওই কেন্দ্রের ভোটাররা এই সব মন্তব্যকে ভালোভাবে নেননি। অমিত শাহ বলেছিলেন, শাহিন বাগের রাগের কারেন্ট যেন বিজেপির ভোটবাক্সে পড়ে। বোঝা যাচ্ছে, সেই রাগের কারেন্ট পড়েছে আপের ভোটবাক্সে।
Comments are closed.