Share Trading Tips: এই মুহূর্তের পরিস্থিতি দেখে ঘাবড়াবেন না, শেয়ার বাজার ভালো হবেই! আর কী বলছেন আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা?
করোনা মহামারির সঙ্গে লড়তে গিয়ে এক অভূতপূর্ব স্থবিরতায় আক্রান্ত বিশ্ব অর্থনীতি। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে চলছে লকডাউন। থমকে গিয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিল্পোৎপাদন। ঘরবন্দি মানুষ।
এই পরিস্থিতির প্রভাব এসে পড়েছে শেয়ার বাজারেও। ২০ জানুয়ারি যে সূচক রেকর্ড গড়ে পৌঁছে গিয়েছিল ৪২,২৭৩-এ। আকাশছোঁয়া এই অবস্থা থেকে ক্রমাগত পতনের পর বর্তমানে তা এসে ঠেকেছে তলানিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে সূচকের পতনের হার ৪০ শতাংশেরও বেশি। সূচক পতনের হার এতই দ্রুত যে হাজার হাজার লগ্নিকারীর লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা স্রেফ উবে গিয়েছে বাজার থেকে। তবে মন্দের ভাল, শেষ পর্যন্ত খানিকটা হলেও ঊর্ধ্বমুখী শেয়ার সূচক। কিন্তু তাতেও চিন্তা কাটছে না লগ্নিকারীদের।
এই পরিস্থিতিতে কী করবেন আর কী করবেন না, তা নিয়েই ধন্দে পড়েছেন লগ্নিকারীরা। প্রবল আশঙ্কা তৈরি হয়েছে লগ্নির ভবিষ্যৎ নিয়ে। বাজার উঠবে কি উঠবে না, তা নিয়ে যখন চিন্তায় লগ্নিকারীরা তখন কয়েনের উল্টোপিঠ দেখার পরামর্শ দিচ্ছেন শেয়ার বিশেষজ্ঞরা।
বিড়লা সান লাইফ এএমসির এমডি ও সিইও এ সুব্রহ্মণ্যম বলছেন, করোনা পরিস্থিতি এখনও বাজারের মাথায় খাঁড়ার মতো ঝুলছে। তবে পতনের গতি দেখে মনে হচ্ছে, তা শেষ পর্যায়ে এসে থামতে চলেছে। এরপর সূচক সর্বোচ্চ নামতে পারে আরও ৬% থেকে ৮% পর্যন্ত। আর এটাই আমাকে ভরসা যোগাচ্ছে যে বাজার ফের ঘুরে দাঁড়াতে চলেছে। তবে রাতারাতি তা হবে না। বলছেন এ সুব্রহ্মণ্যম। তাঁর দাবি, প্রথমে বাজার স্থিতিশীলতায় পৌঁছবে। তারপর শুরু হবে ঊর্ধ্বমুখী দৌড়। কারণ আর পতনের জায়গা নেই। ফলে সূচক যে ফের উঠবে, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত বিড়লা সান লাইফের প্রধান।
বেশ কিছুদিন ধরে কার্যত গোটা বিশ্বে চলছে লকডাউন। জরুরি ছাড়া কোনও ক্ষেত্রেই কাজ হচ্ছে না। ফলে সেই চাপ নিতে হবে অর্থনীতিকে। কিন্তু প্রশ্ন হল, গোটা দুনিয়ার অসংগঠিক ক্ষেত্রের শ্রমিক শ্রেণির যাবতীয় সঞ্চয় অটুট রাখার উপায় কী হবে। অর্থনীতিবিদদের হিসেব বলছে, এই লকডাউন সামাল দিতেই বিশ্বের শ্রমিকদের নাজেহাল অবস্থা হবে। শেষ হবে যাবতীয় সঞ্চয়, সেইসঙ্গে ছাঁটাইয়ের ভ্রূকুটি। বড় বড় সংস্থা নিজেদের শেষ ২-৩ মাসের লাভ পুরোটাই ঢেলে দিতে বাধ্য হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে। করোনাভাইরাস তাণ্ডবে দুনিয়াজুড়ে কার্যত স্তব্ধ পর্যটন, হসপিটালিটি, বিমান-জল-স্থল পরিবহণ। আয়ে এমন ধাক্কায় স্বভাবতই টালমাটাল অবস্থা জনজীবনেও। বেঁচে থাকতে এখন হাত দিতে হচ্ছে জমিয়ে রাখা টাকায়। ফলে ক্রমেই আরও অনিশ্চিত হচ্ছে ভবিষ্যৎ। এই পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরার দাওয়াই বাতলাচ্ছেন দুনিয়ার শেয়ার বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, সূচক পতন হচ্ছে দেখেই ঘাবড়ে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না। অপেক্ষা করুন। আগেও শেয়ার সূচকের এমন বিপুল পতন দেখেছে দালাল স্ট্রিট। ফের তা ঘুরে দাঁড়িয়ে আকাশ ছুঁয়েছে, লগ্নিকারীদের এমন অভিজ্ঞতাও কম নয়। ইক্যুইটি মার্কেট যে ফের ঘুরে দাঁড়াবেই, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা। এখন দরকার শুধুমাত্র একটু আশাবাদী হওয়া।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত থাকতে ইক্যুইটি ফান্ড, ডেব্ট ফান্ড, ইনডেক্স ফান্ড বা ETF এ বিনিয়োগ করতে পারেন। মিউচ্যুয়াল ফান্ড সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্যই ভিন্ন ভিন্ন অপশন রাখে। ফলে সবদিক দেখে একটি ফান্ড বেছে নেওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ। এক্ষেত্রে সেভিংস, ইনকাম ফান্ড, লং টার্ম ওয়েলথ ক্রিয়েশন (লার্জ ও মাল্টি ক্যাপ ফান্ডস) এবং ট্যাক্স সেভিং বা ELSS ফান্ডের দিকে বিশেষ করে নজর রাখুন। লগ্নিকারীদের সিপ বা সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের উপর ভরসা হারাতে না করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি, এই ধরনের বিপদ আপদ সম্বন্ধে আগে থেকেই সতর্ক এই সমস্ত এসআইপি, ফলে লগ্নিকারীদের ভয়ের কারণ নেই।
প্রতি আর্থিক বছর শেষের ঠিক আগে, ফান্ড ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাজার খারাপ চললে, ফান্ড ভাঙিয়ে নেওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। তার সুরাহা কী করে হবে?
বিড়লা সান লাইফের সিইও তথা এমডি এ সুব্রহ্মণ্যম বলছেন, আর্থিক বছরের শেষদিকে কিংবা বাজার খারাপ চললে, পলিসি ভাঙিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। তবে সংস্থাগুলোর সেই টাকা মেটাতে আপাতত কোনও সমস্যা হচ্ছে না বলেও দাবি তাঁর। তবে এই প্রবণতা বজায় থাকলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতির উপর। এই পরিস্থিতিতে বাজারের বিশ্বাস ফেরানোর উপরই ভরসা রাখতে হবে।
আর তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার খারাপ চলছে ঠিকই, তবে এই পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরতে পারলে লাভের আশা ষোলো আনা।
Comments are closed.