ঠিক কী হয়েছিল শীতলকুচিতে? ভাইরাল ভিডিওর পর অন্তর্তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য!
শীতলকুচির জোড়াপাটকি গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, ১০ এপ্রিল ১২৬ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিনা প্ররোচনায় লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে
বুধবার সন্ধ্যেয় তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন কলকাতা টিভির একটি ভিডিও লিংক ট্যুইট করেন। সাংসদের দাবি, ভিডিও ফুটেজটি শীতলকুচির গুলি চলার মুহূর্তের। ট্যুইটে তিনি লেখেন, এই ভিডিও ফুটেজ মোদী-শাহ এবং নির্বাচন কমিশনের পর্দাফাঁস করেছে।
ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকজন মানুষ উত্তেজিত ভাবে লাঠি, বাঁশ হাতে বুথের সামনে ঘোরাঘুরি করছেন। কান্না, আর্ত চিৎকার, মাঝে মাঝে গুলির শব্দ ভেসে আসছে। কিছুক্ষন পরে দেখা যায় দু’জন গ্রামবাসী গুলি বিদ্ধ হয়ে পরে রয়েছেন।
শীতলকুচি কাণ্ডের পর কমিশনের তরফে জানানো হয়েছিল, আত্মরক্ষার জন্য বাহিনী গুলি চালিয়েছে। এদিকে তৃণমূলের তরফে কমিশনে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছিল, ঠান্ডা মাথায় চার গ্রামবাসীকে খুন করা হয়েছে।
শীতলকুচির গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মাঝেই, নিউজ পোর্টাল newslaundry ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীতলকুচির জোড়াপাটকি গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, ১০ এপ্রিল ১২৬ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী বিনা প্ররোচনায় লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।
সিআইএসএফ-এর ডিজি অনিল পান্ডে বলেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই যে বাহিনী আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, গ্রামবাসীদের দাবি, ১০ এপ্রিল ঘটনার দিন, শীতলকুচির ওই নির্দিষ্ট বুথে দুটি আলাদা গোলমালের ঘটনা ঘটে।
ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৯টা নাগাদ পাড়ারই এক শিশু বুথের নিকটবর্তী কাজীর মোড়ে খেলছিল। অভিযোগ, সেই সময় কয়েকজন জওয়ান তাঁকে নিগ্রহ করে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাচ্চাটিকে হেনস্থা করা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। প্রায় চব্বিশ পঁচিশ জন মহিলা, পুরুষ বেরিয়ে আসেন এবং বাহিনীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনী শূন্যে গুলি চালায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই পরিস্থিতি শান্ত হয়।
জওয়ানরা আহত শিশুটিকে মাথাভাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ১০। ১২৬ নম্বর বুধে দুটি গাড়ি আসে। Newslaundry’র প্রতিবদনে গ্রামবাসীদের দাবি, মিলিটারি ড্রেস পড়া কয়েকজন গাড়ি থেকে নামেন এবং ভোটগ্রহণের জায়গায় ঢুকে লাইনে দাঁড়ানো এক যুবককে লক্ষ্য করে গুলি করেন।
সেই সময় ওখানে উপস্থিত পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক বছর চল্লিশের মাকসিদুল মিঞা জানান, আমার থেকে চারজন আগে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল ছেলেটি, হঠাৎ দেখি তাঁকে গুলি করা হল। আমি এবং বাকিরা কিছু বোঝার আগেই ভয়ে ছুটে পালিয়ে এলাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাকসিদুলের মত অন্যান্য গ্রামবাসীরাও জানেন না বাহিনীর কোন শাখা গুলি চালিয়েছে। শুধু মিলিটারি পোশাক দেখে তাঁরা চিহ্নিত করেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাই গুলি চালিয়েছে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে ৩১ বছরের জামিদুল হকের দাবি, গ্রামবাসীরা গুলি চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কোনও প্ররোচনা দেয়নি। বাহিনীর উপর কোনও আক্রমণ হয়নি।
জামিদুলের একটি পায়ে প্লেট বসানো, ১০ বছর আগে দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান। তিনি জানান, আমি ঠিক মত হাঁটতেও পারি না। আঘাতের জন্য কোনও মতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলি। আপনার মনে হয় আমি এই অবস্থায় বুথে গিয়ে অশান্তি করব? জানালেন, আমি যখন ভোট দিতে বুথে যাই, গিয়ে দেখি দুটি গাড়ি এসে বুথের বাইরে দাঁড়ায়। ওরা গাড়ি থেকে নেমেই লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দেয়।
জামিদুলের এক আত্মীয় ঘটনার দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান।
শীতলকুচির ঘটনার জেরে সিআইএসএফ এবং গ্রামবাসী দু’পক্ষই থানায় এফআইআর করেছে।
এক সিআইএসএফ কর্তার কথায়, এখন তদন্ত চলছে তাই ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ আমাদের তরফে প্রকাশ করা হচ্ছে না। তদন্ত মিটলে আমরা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করব। কিন্তু সেই ফুটেজে কি গুলি চলার মুহূর্তের ছবি ধরা পড়েছে? উত্তর মেলেনি।
Comments are closed.