বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া সৈনিক। বরাবরের রাসবিহারী সিট ছেড়ে এবার পাশের কেন্দ্র ভবানীপুরে। কেন্দ্র বদল হলেও ফল বদল হবে না, নিশ্চিন্ত রাজ্য রাজনীতির ‘মহম্মদ আলি’ শোভনদেব চ্যাটার্জি।
শোভনদেব চ্যাটার্জি তৃণমূলের প্রথম বিধায়ক। ১৯৯৮ সালে মমতার দলের একমাত্র বিধায়ক তিনি। তারপর আদি গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। তৃণমূল সরকারের প্রথম চিফ হুইপ শোভনদেব একুশের ভোট লড়ছেন রাজ্যের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ কেন্দ্র ভবানীপুরে। কারণ ভবানীপুরের মমতা ব্যানার্জি এবার লড়েছেন জমি আন্দোলনের আঁতুড় ঘর নন্দীগ্রাম থেকে। ফলে রাসবিহারীর শোভনদেবকে আসতে হয়েছে মমতার ভবানীপুরে। উল্টো দিকে বিজেপির রুদ্রনীল ঘোষ।
বরাবরই প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই করতে রাজি নন তিনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। প্রার্থীর কাছের লোকেরা বলছেন, বিজেপির রুদ্রনীলকে রাজনীতির লোক বলেই ভাবেন না দাদা। তাই তাঁকে আক্রমণেরও প্রশ্ন নেই। কিন্তু বিজেপির অভিযোগের কমতি নেই। কোথাও প্রচারে বাধা আবার কোথাও পথসভায় গোলমাল, বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীলের সব অভিযোগই নিজের পুরনো দলের দিকে। যদিও শোভনদেবের সাফ কথা, গুন্ডামি করে কোনওদিন রাজনীতি করিনি, এবারও করব না। তাঁর কথা, সবাই শান্তিতে প্রচার করুক, মানুষ শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন। এটাই তো ভাল, বলেন শোভনদেব চ্যাটার্জি।
এই বয়সে নতুন কেন্দ্রে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি? প্রার্থীর সহাস্য উত্তর, নেত্রী আমাকে ভবানীপুরের প্রার্থী করেছেন, এটাই আমার অ্যাডভান্টেজ।
লোকসভার ফল বলছে শোভনদেবের লড়াই খুব সহজ নয়। বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিজেপির দাপট রয়েছে। পাশাপাশি ভবানীপুরে বাস করেন বিপুল সংখ্যায় অবাঙালি ভোটার। লোকসভায় তাদের ঢালাও সমর্থন পেয়েছিল বিজেপি। এবারও সেই ভোট পকেটে পুরতে মরিয়া রুদ্রনীল ঘোষ। এতে কি একটু কঠিন হয়ে গেল লড়াই? ৭৬ এর শোভনদেব চ্যাটার্জি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিলেন। লোকসভার ভোটের সঙ্গে বিধানসভার ভোট গুলিয়ে ফেলছেন। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা খেলা।
একটা সময় নিয়মিত বক্সিং করতেন। রিঙয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষকে মেপে নেওয়ার কায়দা শোভনদেবের ৫০ বছরের ইউএসপি। বক্সিং ছেড়ে দিলেও এই শিক্ষাটা মনে গেঁথে গেছে রাজ্যের বিদায়ী বিদ্যুৎ মন্ত্রীর। তার উপর নির্ভর করেই আপাত ভাবে আচমকা কঠিন ভবানীপুরে প্রতিপক্ষকে নক আউট করতে ষোলোআনা আশাবাদী শোভনদেব চ্যাটার্জি।
১৯৭৪ সালের মহাযুদ্ধ ‘রাম্বল ইন দ্য জঙ্গলে’র কথা মনে পড়ে যায়। জাইরের একনায়ক মবুতু সেসে সেকোর আমন্ত্রণে কিংবদন্তি মহম্মদ আলি সে দেশে লড়তে গিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ানশিপ টাইটেল। ৩২ এর আলির প্রতিপক্ষ ছিলেন ২৫ বছরের জর্জ ফোরম্যান। সম্মানের সেই লড়াইয়ের সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল গোটা বিশ্বে। সময়ের তারতম্যের জন্য জাইরের রাজধানী কিনশাসাতে সেই মহাযুদ্ধের আসর বসেছিল ভোর রাতে।
৭ বছর আগে কেড়ে নেওয়া খেতাব ফেরানোর চ্যালেঞ্জ ছিল আলির সামনে। ৮ রাউন্ডের লড়াইয়ে ২৫ বছরের ফোরম্যানকে দাঁড়াতে দেননি আলি। বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ধরা হয় আলি-ফোরম্যানের এই লড়াই। যা ইতিহাসে ঠাঁই পেয়েছে ‘রাম্বল ইন দ্য জঙ্গল’ নামে। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, আলি নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই লড়াই লড়তে বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিলেন জাইরে।
ভোটের বাংলায় প্রাক্তন বক্সার শোভনদেব নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াই লড়ছেন। ঘটনাচক্রে কিংবদন্তী মহম্মদ আলির মতোই তিনিও হোম অ্যাডভান্টেজ পাচ্ছেন না।
Comments are closed.