করোনা কালে ফের প্রকাশ্যে এল নার্সিংহোমের দৌরাত্ম্যের ছবি। এবার নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বেপরোয়া লোভের জেরে নাকাল হলেন বিশ্ববরেণ্য বৈজ্ঞানিক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ছেলে রমেন বসু। অভিযোগ, স্বাস্থ্য বিমা অগ্রাহ্য করে নগদে বিল মেটাতে চাপ দেওয়া হয়। পরিবার স্বাস্থ্যবিমায় অনড় থাকায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ছোট ছেলে রমেন বসুকে ডিসচার্জ করতে পর্যন্ত অস্বীকার করে শরৎ বোস রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। ঘটনায় মহামারির সময় কলকাতার এক শ্রেণির নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের মানসিকতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর হুগলির কোন্নগরে একটি হোমে থাকতেন ডিসিপিএলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রমেন বসু। গত ১১ অগাস্ট জ্বর, সর্দির উপসর্গ নিয়ে শরৎ বোস রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন রমেন বসু। সেই সময় ওই নার্সিংহোমের তরফে স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ১৪ অগাস্ট রমেন বাবুর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। রমেন বাবুর ভাইঝির অভিযোগ, তারপরই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নগদে বিল মেটানোর জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে। এমনকী তাঁর কাছে ১ লক্ষ অগ্রিমও চাওয়া হয়। বলা হয়, স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা মিলবে না। ৩ লক্ষ টাকার বিল মেটাতে হবে নগদে।
অথৈ জলে পড়ে প্রয়াত বিজ্ঞানীর পরিবার। কিন্তু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নগদের দাবিতেই অটল থাকে। বলা হয়, নগদে বিল না মেটালে রমেন বসুকে ডিসচার্জ করা হবে না। লাভ হয়নি রমেন বাবুর পরিচয় দিয়েও। এরপর বিজ্ঞানীর পরিবারের তরফে যোগাযোগ করা হয় বিভিন্ন জায়গায়। শেষ পর্যন্ত অনেক টানাপোড়েনের পর মঙ্গলবার শরৎ বোস রোডের নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পান সত্যেন্দ্রনাথের ছোট ছেলে। তিনি ফিরে গিয়েছেন কোন্নগরের হোমে।
কখনও টাকা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ফেলে রেখে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ আবার কখনও কর্পোরেট স্বাস্থ্য বিমা আছে, এ কথা শুনেই বেড নেই বলে অসুস্থ রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া। করোনা অতিমারি চলাকালীন শহরের বেসরকারি নার্সিংহোমগুলোর বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আনন্দলোক হাসপাতাল এবং ডিসান হাসপাতালের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে বিশেষ বদলায়নি, তা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ছোট ছেলে রমেন বসুর নাকাল হওয়ার ঘটনা।
Comments are closed.