‘বিদেশিদের অসমে থাকতে দেব না’, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের ট্যুইট কি সিএএ-র বিরোধিতা? বিড়ম্বনায় বিজেপি
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে প্রথম আগুন জ্বলে অসমে। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের কার্যত একঘরে করে দিয়ে পথে নামে ছাত্র সমাজ। বেশ কিছু হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটে অসমে। নামে সেনা। কিন্তু ছেদ পড়ে না আন্দোলনে। পরিস্থিতি এমনই হয় যে সিএএ বিরোধী আন্দোলন এড়াতে মাত্র ৫ কিলোমিটার পথের জন্য হেলিকপ্টার চাপতে বাধ্য হন অসমের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
কটন ইউনিভার্সিটি, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের একেবারে প্রথম সারিতে চলে আসেন অসমের বিদ্বজ্জনেরা। গোটা পর্ব জুড়ে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল। নতুন বছরে শেষ পর্যন্ত মুখ খুললেন তিনি। আর অসমের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে তৈরি হল বিভ্রান্তি, যার জেরে বেজায় বিড়ম্বনায় পড়লেন মোদী-অমিত শাহ।
বৃহস্পতিবার অসমের মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন। সেই পোস্টের লিঙ্ক পোস্ট করেন নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলেও। বার্তার নির্যাস, অসমের ভূমিপুত্র হিসেবে আমি আমার রাজ্যে বিদেশিদের বসতি গাড়তে দেব না। এই সর্বানন্দ সোনওয়াল এটা কখনওই বরদাস্ত করবে না। প্রশ্ন উঠছে, অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য কি আসলে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা? কারণ, নাগরিকত্ব আইনের মধ্যে দিয়েই পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্থান থেকে এদেশে আসা অমুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন বারবার অমুসলিম বিদেশিদের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের আওতায় নাগরিকতা দেওয়ার কথা বলে যাচ্ছেন, তখন বিজেপি শাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী কী করে উল্টো কথা বলতে পারেন? চরম অস্বস্তিতে পড়ে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিজেপিকে প্যাঁচে ফেলার এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি কংগ্রেস।
মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা ট্যুইটে তীক্ষ্ণ আক্রমণ ছুড়ে দেন। সোনওয়ালের বক্তব্য ও মোদীর কংগ্রেসকে আক্রমণের প্রতিবেদন ট্যাগ করে কটাক্ষের সুরে বলেন, মোদী-অমিত শাহের মুখ্যমন্ত্রীও দেশদ্রোহী হয়ে সংসদ এবং সিএএ-র বিরোধিতা করছেন। বরখাস্ত করবেন না ওঁকে? বিরোধীদের উপর হামলা করার আগে নিজের ঝুলির দিকে তাকাবেন না? নাকি এটা হাতির দাঁতের মতো খাওয়ার এক আর দেখানোর আর একের মত ব্যাপার?
নাগরিকত্ব ইস্যুতে অনেকদিন ধরেই ফুঁসছে অসম। এনআরসিতে লক্ষ লক্ষ লোকের নাম বাদ যাওয়া দিয়ে শুরু হয়ে যা চূড়ান্ত রূপ পায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সর্বাত্মক বিরোধিতায়। এই পরিস্থিতিতে প্রবল চাপের মুখে পড়েই কি সোনওয়াল এমন বিবৃতি দিলেন? যা আপাতভাবে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
Comments are closed.