সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই রুপোলি পর্দায় অভিষেক হয় বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। তিনিই হলেন সত্যজিৎয়ের ফেলুদা এবং অপু। তিনি কোনটা বেশি ফেলুদা নাকি অপু, তা বলা বড় দায়। তবে ফেলুদা হওয়ার আগে থেকেই ফেলুদার বিশাল ভক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজে ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করবেন তা কোনদিনও স্বপ্নেও ভাবেননি সৌমিত্র।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি যে, একদিন আমিই এই চরিত্রে অভিনয় করব। যে দিন মানিকদা আমাকে প্রথম ডেকে বললেন যে, আমি ‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ‘ফেলু মিত্তির’ চরিত্রে অভিনয় করব কিনা, আমি শুনেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।” এরপরেই ১৯৭৪ সালে সত্যজিৎ রায় তৈরি করেন তাঁর ‘সোনার কেল্লা’। আর সৌমিত্র হয়ে ওঠেন ফেলুদা। ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ১৯৬৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’। ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প। ফেলুদা সিরিজে রয়েছে মোট ৩৫টি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস। যদিও সত্যজিতের হাত ধরে রুপোলি পর্দায় ফেলুদাকে দেখা যায় কেবল দুবার। “সোনার কেল্লা” (১৯৭৪) ও “জয় বাবা ফেলুনাথ” (১৯৭৮) এই দুটি ছবিতেই ফেলুদার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র। যেন সত্যজিৎয়ের ফেলুদার স্কেচ থেকে উঠে এসেছেন সৌমিত্র, নয়তো ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্রকে ভেবেই স্কেচ এঁকেছিলেন সত্যজিৎ। ফেলুদার অনেক বইয়ের কভারে ফেলুদার মুখের সাথে প্রচুর মিল রয়েছে সৌমিত্রর। তবে সত্যজিৎয়ের শুরুর স্কেচগুলি ছিল একটু আলাদা। সাক্ষাৎকারে সেকথা স্বীকার করেছিলেন তিনি। তবে কোনদিনও ভাবেননি নিজেকে সেই চরিত্রে দেখবেন তিনি।
যদিও সৌমিত্রের পরে বহু অভিনেতাকে দেখা গিয়েছে ফেলুদার রূপে। কেবল দুটি ফেলুদার ছবিতে অভিনয় করেও তাঁর থেকে সেরা ফেলুদা হয়তো আর কেউ হতে পারবে না। সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর মানিকদা থাকলে হয়তো আরও ফেলুদার ছবিতে অভিনয় সুযোগ পেতেন তিনি। তিনি বলেন, “ফেলুদা, আমি আর মানিকদা ছিলাম একটি সুখী ত্রিভূজীয় প্রেমকাহিনির তিনটি চরিত্র।” বাঙালি দর্শকের মনে এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছে সৌমিত্রর ফেলুদা। সেখানে সর্বদাই চিরউজ্জ্বল থাকবে তাঁর ও তাঁর মানিক দার ফেলুদা।
Comments are closed.