দশম শ্রেণির প্রাক-বোর্ড পরীক্ষায় ফেল, পরে তিনিই কিনা গুজরাতের উচ্চ ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিভাগের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি! বিস্ময় হলেও এটাই সত্যি।
জীবনে দু’বার স্বর্ণ পদক জিতেছিলেন, সেটাও আবার অ্যাকাডেমিক জীবনের শেষ দিকে। সাধারণ পড়ুয়া থেকে মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথমবারের চেষ্টাতেই ইউপিএসসি পাশ! জীবনে সফল হওয়ার বড় পাঠ যে ব্যর্থতা থেকেই আসে তা আর একবার প্রমাণ করেছেন জয়পুরের আইএএস অফিসার অঞ্জু শর্মা।
স্কুল জীবনে একটা পরীক্ষার ফল খারাপ হলেই হতাশায় ডুবে যান বহু পড়ুয়া। কেউ কেউ বেছে নেন চরম পদক্ষেপ। কিন্তু স্কুলের পাশ-ফেল যে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না। লক্ষ্যে অবিচল থাকলে, প্রবল পরিশ্রম আর ইচ্ছাশক্তির কাছে সব প্রতিবন্ধকতাকেই নতজানু হতে হয়। কঠোর পরিশ্রমের মূল্য ঠিকই পাওয়া যায়। এর জ্বলন্ত উদাহরণ আইএএস অফিসার অঞ্জু শর্মা।
একটি রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির চেয়ারে বসে নিজের স্কুল জীবনের দিকে ফিরে তাকালে বেশ অবাকই লাগে অঞ্জুর। ক্লাস টেনের প্রি-বোর্ড পরীক্ষা চলছে। কেমিস্ট্রি পরীক্ষার আগের রাত। রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ। ঘুমোতে যাওয়ার আগে বই খুলে কেঁদেই ফেললেন অঞ্জু। কিছুই পড়া হয়নি যে! কী লিখব পরীক্ষায়? সারারাত ধরে পড়েও ভয়ে-আতঙ্কে মাথায় কিছুই ঢুকল না। পরদিন পরীক্ষার খাতায়ও কিছুই লিখতে পারেননি। ফল বেরতে দেখা গেল যা ভয় ছিল তাই, কেমিস্ট্রিতে ফেল!
খুব ভালো পড়ুয়া না হলেও এর আগে কোনওদিন ফেল করতে হয়নি অঞ্জুকে। এখন বাবা-মা কে কী বলব? বন্ধুরা কী তাকে নিয়ে ঠাট্টা করছে? মনে হাজারো উদ্বেগ, চোখে জল নিয়ে বাড়ি গেল কিশোরীটি। যদিও ফেল করার কথা শুনে বাবা-মা মোটেই রাগ করলেন না। বরং, বোঝালেন একটা পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়া মানে সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়। আবার শুরু কর।
মনে জোর ফিরে পায় মেয়েটি। আর জীবনের একটা মূল্যবান পাঠ পেল সেদিন সে। কোনও কিছুই শেষ মুহূর্তের জন্য ফেলে রাখতে নেই। পরীক্ষার আগের রাতে সব পড়ে নেওয়ার ভাবনা, কোনও কাজ করতে দিলে তা পরে দেখা যাবে, এই অভ্যেস থেকে সরে এলেন অঞ্জু। এই বীজমন্ত্রই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি বলে জানান বর্তমান গুজরাতের উচ্চ ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিভাগের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। তাই ক্লাস টেনে বিজ্ঞান বিষয়ে ফেল করা সত্ত্বেও বিজ্ঞানের ছাত্রী হিসেবেই রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন তিনি। শুধু তাই নয় গোল্ড মেডেলও পেয়েছিলেন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমবিএ করেন। সেখানেও স্বর্ণ পদক।
সালটা ছিল ১৯৯১। এমবিএ শেষ, ২২ বছরের অঞ্জু নিজেকে আরও একবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। তা হল এক চান্সেই ইউপিএসসি পাশ! না, সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকেননি অঞ্জু। তবে প্রতিদিন রুটিন মাফিক পড়াশোনা করেছেন। বাকি সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। ইউপিএসসি-র ফল বেরতেই পাড়া-প্রতিবেশীরা তাজ্জব! সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, ‘এ মেয়েতো সারাদিনই ঘুরে বেড়াতো, কীভাবে ইউপিএসসি পার করল?’
আইএএস অফিসার অঞ্জু শর্মার কথায়, নিজের লক্ষ্যে ফোকাস রাখলে কোনওকিছুই তাতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না। সেই ক্লাস টেনের কেমিস্ট্রির পরীক্ষার আগের রাতই তাঁকে শিখিয়ে দিয়েছিল পড়াশোনাটা রুটিন মাফিক সেরে রাখতে হবে আগেই। আর পরীক্ষার আগে চাপমুক্ত থাকা দরকার। কোনও পরীক্ষাই জীবনের থেকে বড় হতে পারে না।
ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের অঞ্জুর পরামর্শ, প্রবল ইচ্ছাশক্তি, সংকল্প আর জেদ। ফল কী হবে না ভেবে কাজের উপরে জোর দাও। নিজের সারা জীবনকে ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য উৎসর্গ করার প্রয়োজন নেই। দরকার পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতি এবং নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা। একটা, দুটো ব্যর্থতা মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয় বরং সাফল্যের দিকে আরও কিছুটা এগোনো।
Comments are closed.