বন্ধ্যা জমিতে ফসল ফলিয়ে লাখপতি ঝাড়খণ্ডের গানসু মাহাতো, বলছেন, পরিশ্রম আর পরিকল্পনা থাকলে সব সম্ভব

কারখানায় হাড়ভাঙা খাটুনির বিনিময়ে পারিশ্রমিক ছিল মাত্র ৫০ টাকা। সঙ্গে উপরি হিসেবে সইতে হত সুপারভাইজারের অপমান। সেই কাজ ছেড়ে, নিজের বন্ধ্যা জমিতে ফসল ফলিয়ে বছরে ৫০ লক্ষ টাকা আয় করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের সদমা গ্রামের গানসু মাহাতো।
পৈত্রিক জমি ছিল প্রায় ৯ একর, কিন্তু তাতে ফসল ফলত না। তাই পেটের দায়ে ১৯৯১ সাল নাগাদ ঝাড়খণ্ডের সদমার বাড়ি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এক কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন গানসু মাহাতো। প্রতিদিন ৫০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত তারপর, কারখানায় হাড়ভাঙা খাটুনি, বিনিময়ে পারিশ্রমিক মাত্র ৫০ টাকা। এইভাবেই দীর্ঘদিন সংসার চালিয়েছেন গানসু। একদিন কারখানায় কাজ সেরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তাতেও গোঁসা হয় সুপারভাইজারের। অভিযোগ, গানসুকে মারতে এসেছিলেন সেই সুপারভাইজার। এরপর আর কাজে যাননি গানসু। প্রতিজ্ঞা করেন নিজের বন্ধ্যা জমিতেই ফসল ফলাবেন, কারও দাসত্ব করবেন না।
এরপর দিনরাতের কঠোর পরিশ্রম আর পরিকল্পনা দিয়ে ৯ একর অনুর্বর জমিতে জৈব চাষ করে এখন লাখপতি গানসু মাহাতো। এখন জৈব চাষ বিষয়ক পরামর্শ নিতে আশেপাশের হাজার হাজার কৃষক ছোটেন গানসুর কাছে। কৃষিবিদ্যার ছাত্ররাও সদমা গ্রামের গানসু মাহাতোর সঙ্গে আলোচনা করতে যান। যে যুবকেরা রোজগারের তাগিদে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন, তাঁরাও গানসুকে দেখে গ্রামে ফেরার সাহস পেয়েছেন। ফের কৃষিকাজকেই তাঁদের পেশা করতে শুরু করেছেন।
যদিও গানসুর সাফল্যের রাস্তাটা সহজ ছিল না। সেটা ১৯৯৫ সাল। বন্ধ্যা জমিতে প্রথম ধান ফলেছিল। এইভাবে কয়েক বছর চাষবাস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর, ১৯৯৮ সাল নাগাদ ক্যাপসিকাম চাষ করেন গানসু। পরিশ্রম আর পরিকল্পনা বিফলে যায়নি। ক্যাপসিকাম বিক্রি করে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয় হয় তাঁর।

এরপর, ঋণ নিয়ে জৈব চাষ শুরু করেন তিনি। ক্যাপসিকাম, তরমুজ চাষ করে বিশাল লাভের পর ফুল চাষের প্রতি আগ্রহ জন্মায় গানসুর। ২০১৬ সালে শুধু ফুল চাষ করেই তাঁর লাভ হয় ৩৫ লক্ষ টাকা। এরপর থেকে জমি ভাগ করে ধান, ক্যাপসিকাম, তরমুজ, বিভিন্ন রকম ফুল চাষ করে বছরে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আয় করেন ঝাড়খণ্ডের সাদমা গ্রামের বাসিন্দা গানসু মাহাতো। বড় মেয়ে বিএড পাশ করেছেন, ছেলে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছেন। তাঁরাও সময় পেলে বাবাকে সাহায্য করেন।

Comments are closed.