লক্ষ্যের কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। নামের সঙ্গে ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটা জুড়ে গেলেও মনের জোরে প্রতিবার সেই প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন আইএএস অফিসার ইরা সিঙ্ঘল।
জন্ম থেকে স্কোলিওসিসে আক্রান্ত। মেরুদণ্ডের অসুখের জন্য স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। তাই একাধিকবার সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করেও স্রেফ শারীরিক কারণে আটকে যেতে হয় তাঁকে। অবশেষে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালের নির্দেশে, দেশের প্রথম প্রতিবন্ধী আইএএস অফিসার হলেন জন্মসূত্রে মিরাটের বাসিন্দা ইরা সিঙ্ঘল। ইরাই প্রথম শারীরিক প্রতিবন্ধী মহিলা, যিনি ইউপিএসসি পরীক্ষায় প্রথম হলেন। বর্তমান উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের ডেপুটি কমিশনার ইরা সিঙ্ঘলের লড়াই অনুপ্রেরণা যোগ্য।
ইরার তখন বয়স বারো, মিরাট ছেড়ে দিল্লি চলে আসে পরিবার। নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে কখনও দুর্বলতা বলে ভাবেননি ইরা। ছোট থেকেই একরোখা, যা ভাবেন তা করে ছাড়েন। পড়াশোনায় আগাগোড়া ভালো ফল করা ইরা সিঙ্ঘল নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পাওয়ার পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। এরপর, বিখ্যাত চকোলেট কোম্পানি ‘ক্যাডবেরি’র স্ট্র্যাটেজি ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। যদিও ছোট থেকেই তাঁর লক্ষ্য আইএএস হওয়া। ইরা সিঙ্ঘলের কথায়, ছোটবেলায় মিরাটে থাকতে কার্ফু জারি হলেই সবাই বলাবলি করত, ডিএম কার্ফু জারির নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা শাসকের এমন ক্ষমতা ইরাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে।
২০১৫ সালে তাঁর লক্ষ্যপূরণ হলেও, সাফল্যের রাস্তাটা ছিল কঠিন এবং দীর্ঘ। ২০১০ থেকে ২০১৩, প্রতিবার সিভিল সার্ভিসের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেও তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আয়কর বিভাগ ছাড়া অন্য কোথাও নিয়োগ পাননি তিনি। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেবল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাঁকে লক্ষ্যে পৌঁছতে দেবে না, মানতে পারেননি ইরা। দ্বারস্থ হন সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল বা ক্যাটের। এক বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৪ সালে মামলায় রায় যায় ইরার পক্ষে। যদিও রায় ঘোষণার ৩ মাস কেটে গেলেও কোনও নিয়োগপত্র না আসায় চতুর্থবার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন। মেইনস পরীক্ষা দেওয়ার সময়ই আগের নিয়োগপত্র হাতে পান ইরা সিঙ্ঘল। আর ২০১৫ সালে চতুর্থবারের পরীক্ষায় ফল বেরনোর তাঁর র্যাঙ্ক হয় এক নম্বর।
ইউপিএসসির ইতিহাসে দৃষ্টান্ত তৈরি করা আইএএস ইরা সিঙ্ঘল কখনও চাননি, শারীরিক সমস্যার জন্য তাঁকে কেউ দয়ার চোখে দেখুক। হাঁটতে সমস্যা হলেও কখনও ক্রাচ ব্যবহার করেন না। আইএএস ইরা সিঙ্ঘলের কথায়, নিজের স্বপ্ন নিজেকেই পূরণ করতে হয়, অন্য কারও সাহায্যে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছানো যায় না।
Comments are closed.