বাস্তবের গল্প থেকে সিনেমা হয় নাকি সিনেমার কাহিনির প্রতিফলন বাস্তবে ঘটে এ তর্ক এবং চর্চা পুরনো। তবে মেরঠের সঞ্জুরানি ভার্মার জীবনের গল্প ঠিক যেন একটি হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্য।
‘শাদি মে জরুর আনা’ ছবিতে অফিসার হওয়ার স্বপ্ন পূরন করতে বিয়ের পিঁড়ি থেকে পালিয়ে ছিলেন আরতি (কৃতি খারবান্দা)। বাড়ি ফিরে এসেছিলেন পিসিএস অফিসার হয়ে। মেরঠের তরুণী সঞ্জুরানিও বিয়ে এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। সাত বছর পরিবারের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না। অবশেষে মেয়ে বাড়ি ফিরলেন অফিসার হয়ে।
২০১৮ সালের উত্তরপ্রদেশ প্রভিন্সিয়াল সিভিল সার্ভিসেস (পিসিএস) পরীক্ষায় পাশ করেছেন সঞ্জুরানি ভার্মা। কিছুদিনের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের কমার্শিয়াল ট্যাক্স অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন তিনি।
সবটাই ছিল একা মেয়ের স্বপ্নপূরণের যুদ্ধ। উত্তরপ্রদেশের মেরঠের বাসিন্দা সঞ্জুরানি ভার্মা বড় হয়ে উঠছিলেন আর পাঁচটা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের মতোই। মায়ের আচমকা মৃত্যুর পর পরিবারের লোকজনও তাঁকে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বিয়ে থা করে সংসার করার পরামর্শ দেন। কিন্তু সঞ্জু রাজি ছিলেন না। তাঁর ইচ্ছে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তবেই বিয়ের কথা ভাববেন। কিন্তু পরিবার নাছোড়বান্দা। বাড়িতে থাকলে বিয়ে তাঁকে করতেই হবে। কিন্তু তাতে নিজের স্বপ্ন যে পূরণ হবে না! নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছের কী হবে? এসব ভেবে একদিন কঠোর সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেন সঞ্জু। সালটা ২০১৩। বিয়ে এড়াতে বাড়ি ছেড়ে সোজা দিল্লি চলে গেলেন। শুরু করলেন নিজের স্বপ্নের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি। শুনতে হয়ত সহজ লাগছে, কিন্তু সঞ্জুর কাজে এই লড়াই ছিল ভীষণ কঠিন। থাকা-খাওয়া, পড়াশোনার খরচ মেটাতে হিমশিম খেয়েছেন। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। সঞ্জুর কথায়, ২০১৩ সালে তো শুধু বাড়ি ছাড়িনি, পড়াশোনাও ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কারণ আমার কাছে পড়াশোনা চালানোর টাকাই ছিল না। তখন আমি বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করি। একটি বেসরকারি স্কুলে আংশিক সময়ের শিক্ষিকার কাজ করি। তাই দিয়ে পরে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।
মেরঠের আর জি ডিগ্রি কলেজে গ্র্যাজুয়েশন করার পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন সঞ্জুরানি ভার্মা। আজ তিনি উত্তরপ্রদেশ প্রভিন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস এগজামিনেশন ২০১৮ উত্তীর্ণ হয়ে অফিসার হতে চলেছেন। যদিও মেরঠের সঞ্জুরানি ভার্মা জানান এ লড়াই শেষ হচ্ছে না। ঝকঝকে এই তরুণীর লক্ষ্য ইউপিএসসি ক্র্যাক করে জেলাশাসক হওয়া।
Comments are closed.