অনাথ আশ্রমে থাকা, খবরের কাগজ ফেরি থেকে হোটেলে বয়ের কাজ, হাজার বাধা পেরিয়ে আইএএস কেরলের আব্দুল নাসের

আইএএস অফিসার বি আব্দুল নাসের। বড় হয়ে ওঠা অনাথ আশ্রমে। পেট চালাতে খবরের কাগজ বিক্রি করা থেকে হোটেলের ওয়েটার, সবই করেছেন। তবু পড়াশোনাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। কেরলের কোল্লামের ৪৭তম জেলা কালেক্টর বি আব্দুল নাসেরের সাফল্যের কাহিনির পরতে পরতে রয়েছে তাঁর হার না মানা মানসিকতা আর স্বপ্ন ছোঁয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবাকে হারান কেরলের থালাসেরির আব্দুল নাসের। ৬ সন্তান নিয়ে অথৈ জলে পড়েন মা মঞ্জুমা হাজ্জুম্মা। সন্তানদের মানুষ করতে ঠিকে ঝিয়ের কাজ নেন। কিন্তু বাড়ি বাড়ি সেই কাজ করলে ছেলেদের দেখবেন কখন! বি আব্দুল নাসেরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এক অনাথ আশ্রমে। এদিকে সংসারে চাপ বাড়তে থাকায় ওই বয়স থেকেই রোজগার শুরু করতে হয় নাসেরকে। মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকে কখনও হোটেলের ডেলিভারি বয়, কখনও ক্যাশিয়ার, খবর কাগজ বিক্রি থেকে এসটিডি বুথ অপারেটর কিংবা গৃহ শিক্ষকতার কাজ, সবই করেছেন। আইএএস অফিসার বি আব্দুল নাসেরের কথায়, তিনি একেবারেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন না। বর্তমান নীতি আয়োগ সিইও অমিতাভ কান্ত ছিলেন সে সময় থালাসেরির সাব কালেক্টর। মাঝে মাঝেই তিনি আব্দুল নাসেরদের অনাথ আশ্রমে এসে পড়ুয়াদের উৎসাহিত করতেন। তাঁকে দেখেই প্রথম আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন কিশোর বি আব্দুল নাসের। ত্রিশূর বাতানাপল্লী ইসলামিয়া কলেজ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পাস করে আব্দুল নাসেরের কলেজ জীবন শুরু হয়। একদিকে চলতে থাকে জীবন ধারণের জন্য রোজগার আর একদিকে পড়াশোনা। থালাসেরির সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হওয়ার পর কোঝিকোড় থেকে স্নাতকোত্তর এবং বিএড। যদিও এরপর ১৯৯৪ সালে কান্নুরের হেলথ ইন্সপেক্টর ও পরে একটি স্কুলে শিক্ষকতার পেশায় ঢুকতে বাধ্য হন। কিন্তু লক্ষ্য যে আইএএস অফিসার হওয়া। চেন্নাই, দিল্লি, আলিগড়, ঘুরে ঘুরে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি সারেন। এরপর ২০০২ সালে পাশ করেন সিভিল সার্ভিসের প্রিলিমিনারি, ২০০৪ সালে মেইনস ক্লিয়ার করেন। এরপর ২০০৬ সালে ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে যোগ দেন আব্দুল নাসের। ২০১৫ সালে কেরলের সেরা ডেপুটি কালেক্টরের সম্মান পান। কেরলের এন্ট্রান্স এক্সাম কমিশনার থাকাকালীন তাঁর উদ্যোগেই প্রথম অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয় রাজ্যে।
৪৯ বছর বয়সী আইএএস অফিসার বি আব্দুল নাসেরের অভিজ্ঞতা, সাধারণ মানুষের কাজ করা, তাঁদের পাশে থাকার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই। এই সাফল্যের পরও আইএএস অফিসারের একটাই আক্ষেপ, তাঁর স্বপ্ন ছোঁয়ার আগেই গত হয়েছেন তাঁকে বড় করার স্বপ্নে পরিচারিকার কাজ করা মা। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, কিন্তু আক্ষেপ যাওয়ার নয়।

Comments are closed.