হিরন্ময় দে থেকে নিজেকে সুচিত্রা দে’তে রূপান্তরিত করছেন। মাঝে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। নিজের এই রূপান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য প্রতি পদে তাঁকে বহু লাঞ্ছনার শিকারও হতে হয়েছে। যা নিয়ে সে সময় অজস্র সংবাদমাধ্যমে লেখালেখিও হয়। কিন্তু এত বছর পরেও কি অবস্থার পরিবতর্ন হয়েছে? নারী দিবসে রূপান্তরিত নারী সুচিত্রা দে কথা বললেন TheBengalStory-এর সঙ্গে।
পেশায় শিক্ষিকা সুচিত্রা ইংরেজি এবং ভূগোলে মাস্টার্স করেছেন। কয়েক বছর আগে রুপান্তির হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে এক কথায় তাঁর জীবনটাই পাল্টে যায়। রাতারাতি সংবাদ মাধ্যমের শিরনামে উঠে আসেন। শুরুরটা যতটা কঠিন ছিল, এখন কি পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে? দেখুন আমি বাইরের জগৎ নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নেই। ওটা সবসময় পরিবর্তিত হয়। আমাদের নিজেদের লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে। সেদিকেই এগিয়ে যেতে হবে। তাতেই আমাদের মুক্তি, জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। একজন নারীর ক্ষেত্রেও তাই। তবেই সে তাঁর প্রকৃত সম্মান ফিরে পাবে। কিছুটা থেমে গিয়ে সুচিতার মন্তব্য, আসলে কি জানেন এই কয়েক বছরে জীবনে আমি এত যন্ত্রনা পেয়েছি যে, কে কি বলছে তা সত্যি গুরুত্ব দিয়ে ভাবি না।
আপনার মতো তো আরও অনেকে রয়েছেন যাঁরা হয়তো ভাবছেন নিজেদের প্রকাশ করবে, কিন্তু সমাজের ভয়ে পারছেন না। তাঁদেরকে কী বলবেন? দেখুন, আমরা প্রত্যেকেই একটা নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে ভালোবাসি। কিছুতেই ওই ‘আশ্রয়’ থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই না। কিন্তু জীবনে সফল হতে গেলে ওই কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
কিছুটা হেসে সুচিত্রার মন্তব্য, এখন হয়তো অনেকে আমরা প্রশংসা করছে। কিন্তু যখন আমি একজন রূপান্তরিত নারী হয়ে প্রথমে সমাজের সামনে আসি তখন কিন্তু সবাই ‘ছিঃ ছিঃ’ করেছিল। যদিও আশার কথা এখন অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে এখনও আমার দিকে অনেকে বাঁকা চোখে তাকান। অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানে আমায় নিমন্ত্রণ করা হয় না। যদিও তাতে আমার কিছু যায় আসে না। দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন সুচিত্রা।
আপনার কী মনে হয়, আপনি বা আরও কয়েকজন যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে করে আপনাদের মতো যাঁরা রয়েছেন তাঁদের লড়াইটা কিছুটা সহজ হবে? সুচিত্রার কথায়, প্রথমতো আমি কাউকে অনুপ্রেরণা দিতে চাই না বা সমাজে পরিবর্তনে আনতে নিজেকে রূপান্তরিত করিনি। প্রত্যেক মানুষই নিজেকে সন্তুষ্ট রাখতে চায়, ভালো রাখতে চায়। আমি শুধু সেটাই করেছি। আর কিচ্ছুনা। আমি অন্তরে একজন নারী ছিলাম। আমি সমাজের কাছেও তাই হতে চেয়েছি।
স্কুলে পড়ানোর পাশপাশি অবসরে গান শুনতে, রান্না করতে পছন্দ করেন সুচিত্রা। লতা মঙ্গেশকর তাঁর প্রিয় গায়িকা। পাশপাশি বাড়িতে অতিথিদের পাত পেড়ে খাওয়াতেও ভালোবাসেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর মতোই মানুষদের অধিকার নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছেন।
এই যে দীর্ঘ সংঘর্ষ, এতে ক্লান্ত হননা? দেখুন কখনও কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়ি, একা লাগে। তখন নিজেকে বোঝাই। সময়ের উপর ছেড়ে দিই। সময় সবকিছু ঠিক করে দেয়। কথায় কথায় কিছুটা অভিমানের সুরেই সুচিত্রা বললেন, আসলে আমাদের এই পিতৃ তান্ত্রিক সমাজে যেখানে এখনও প্রকৃত মেয়েরাই বঞ্চিত, সেখানে রূপান্তরিত নারী হিসেবে নিজেদের অধিকার চাওয়াটা কিছুটা বিলাসিতা।
Comments are closed.