সিবিআইকে ‘খাঁচার তোতাপাখি’ বলে জেল থেকে ফেসবুক পোস্ট সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের, পাশে দাঁড়ালেন নবনীতা দেবসেন
সিবিআইকে খাঁচার তোতাপাখি বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট, এবার ভুবনেশ্বরের জেল থেকে সেই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেই ফেসবুকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে একহাত নিলেন সিবিআইয়েরই হাতে গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়। লিখলেন, ‘খাঁচা বন্দি তোতাদের ঠোক্করে নুইয়ে পড়ার বান্দা আমি নই।’ পাশে পেলেন সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনকে।
সরস্বতী পুজোর দিন, স্ত্রী কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘সুমনের কথা’ শীর্ষক পোস্ট। বর্তমানে জেলবন্দি সুমন চট্টোপাধ্যায় যেখানে স্মরণ করেছেন প্রয়াত সাংবাদিক গৌরকিশোর ঘোষকে। নিজের হাজতবাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন এমার্জেন্সির বিরোধিতা করে জেলে যাওয়া গৌরকিশোর ঘোষের জেল যাত্রার। তিনি লিখেছেন, শেষ হাসিটি হাসব আমিই। এরপরই সিবিআইকে কার্যত তুলোধোনা করে জেলবন্দি সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের প্রত্যয়ী ঘোষণা, খাঁচা বন্দি তোতাদের ঠোক্করে নুইয়ে পড়ার বান্দা আমি নই। প্রায় দেড়মাস ওড়িশার ভুবনেশ্বরে জেলবন্দি অবস্থায় যে মানসিকভাবে মাঝেমাঝেই দুর্বল হয়ে পড়ছেন ফেসবুক বার্তায় তাও স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলা সাংবাদিকতা জগতে প্রথম সারির এই সাংবাদিক। সেসময় তাঁর সহায় হচ্ছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। জেলের কুঠুরিতেই গুনগুন করে গেয়ে উঠছেন, বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান… জানিয়েছেন তাও।
আটত্রিশ বছর আগে এমনই এক সরস্বতী পুজোর দিন সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয়েছিল বলে পোস্টে লিখেছেন সুমন চট্টোপাধ্যায়। দিনটি ছিল ৯ ই ফেব্রুয়ারি। ঘটনাচক্রে এবার সরস্বতী পুজোও সেই ৯ ই ফেব্রুয়ারি। পোস্টের একেবারে শেষ অংশে সুমন চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, দোহাই আপনাদের কেউ আমার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবেন না। তাঁর বক্তব্য, পাজিদের উচিত শিক্ষা দেবেন যিনি সকল কাজের কাজী। ফেসবুক পোস্টে গৌরকিশোর ঘোষ ছাড়াও সুমন উল্লেখ করেছেন হামদি বের নামও।
সুমনের স্ত্রীর ফেসবুক ওয়ালে এই পোস্ট পাবলিশ হতেই শুরু লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট। এমনই একটি কমেন্ট বক্সে নব নীতা নামের অ্যাকাউন্ট থেকে সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন সুমন চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে লিখেছেন, ‘সুমন তুমি আবার সগৌরবে জিতে ফিরে আসবেই… আমরা জানি।’ এব্যাপারে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য নবনীতা সেনকে ফোন করা হলে বলেন, ‘আমি সুমনকে ছোট্টবেলা থেকে জানি। ঘটনার সত্য-মিথ্যে যাই হোক, আমি ওর পাশে আছি
সুমনের স্ত্রী কস্তুরী চট্টোপাধ্যায় নবনীতা দেবসেনের কমেন্টের রিপ্লাইয়ে নিজের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন। অধিকাংশ কমেন্টেই সুমন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ পেলেও জনৈক বিমল রায় তাঁর কমেন্টে লিখেছেন, ওনার কথা এখন যত কম বলা যায় ততই ভালো। যদিও সত্যি জানতে দোষ নেই বলে কমেন্ট তাঁর। যে সত্যের, অনিবার্য জয়ের প্রতীক্ষায় রয়েছেন বলে পোস্টের একেবারে শেষপ্রান্তে লিখেছেন সুমন চট্টোপাধ্যায়ও নিজেও।
গত বছর ডিসেম্বরের ২০ তারিখ চিটফান্ড প্রতারণা মামলায় কলকাতায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন এই সময় পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক সুমন চট্টোপাধ্যায়। তারপর তাঁকে ভুবনেশ্বরে নিয়ে যায় সিবিআই। সেই থেকে ভুবনেশ্বরের জেলেই বন্দি রয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা আইকোরের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে সুমন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই।
Comments are closed.