দীর্ঘ জল্পনার অবসান হতে চলেছে শনিবার। মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভাতেই শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রায় নিশ্চিত। সেখান থেকে কী বার্তা দেবেন সদ্য তৃণমূলত্যাগী ও পদত্যাগী মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী? দীর্ঘদিন পর প্রথম ‘রাজনৈতিক’ সভা থেকেই কি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলবেন তিনি? এবারই খুলে বলবেন দলের বিরুদ্ধে তাঁর মান- অভিমান ও অভিযোগের কথা?
গত কয়েক মাস ধরে শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে উত্তোরত্তর জল্পনা বাড়ছিল। শনিবারই সেই জল্পনা শেষ হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দিয়ে কী বক্তব্য রাখতে চলেছেন নন্দীগ্রামের সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক?
একে একে মন্ত্রিত্ব, বিধায়ক এবং সব শেষে দলের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়া শুভেন্দুকে নিয়ে এখন ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব। নাম না করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। কম যাননি অভিষেক ব্যানার্জিও। এছাড়া শুভেন্দু ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী সৌগত রায় তাঁকে ‘বেইমান’, আর এক সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি ‘দুষ্টু গুরু’ এবং মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ‘মীরজাফর’ বলে আক্রমণ করেছেন। যদিও এতকিছু আক্রমণ ও নিশানার কোনও প্রত্যুত্তর দেননি শুভেন্দু। পাল্টা আক্রমণের রাস্তাতেও হাঁটেননি। বরং বারবার তিনি বলেছেন, ‘অরাজনৈতিক’ সভা থেকে কোনও রাজনৈতিক আক্রমণ করবেন না। তাছাড়া ব্যক্তি আক্রমণেও বিশ্বাস করেন না। তবে শনিবার তো নিজের গড় মেদিনীপুরে তৈরি থাকবে রাজনৈতিক মঞ্চ। সেখান থেকেই কি তবে সদ্য পদ ও দলত্যাগী শুভেন্দু আক্রমণ শানাবেন তাঁর পুরনো দলকে?
সূত্রের খবর, এই রাজনৈতিক সভা থেকে শুভেন্দুর আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি নন,তাঁর নিশানা হবেন অভিষেক ব্যনার্জি। অভিষেককে নিয়ে দলের অন্দরে শুভেন্দুর ক্ষোভ প্রায় সর্বজনবিদিত। গত অক্টোবরে শুভেন্দুর ‘প্যারাসুটেও নামিনি, লিফটেও উঠিনি, সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে উঠেছি’ মন্তব্যের নিশানায় যে অভিষেকই ছিলেন তা নিজেই পরে স্পষ্ট করে দেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। কিছুদিন আগে নাম না করে শুভেন্দুকে তাঁর পাল্টা কটাক্ষ ছিল, ‘লিফটে উঠলে ডায়মন্ড হারবার নয়, দক্ষিণ কলকাতায় ভোটে দাঁড়াতাম। দলের একাধিক পদের অধিকারীও হতাম।’ সেই সভা থেকে নাম না করে শুভেন্দুকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেও আক্রমণ শানিয়েছিলেন অভিষেক। মনে করা হচ্ছে, মেদিনীপুরের সভা থেকে এসবেরই কড়ায় গণ্ডায় জবাব দেবেন শুভেন্দু।
এদিকে সারা রাজনৈতিক কেরিয়ারে তৃণমূল রাজনীতি করা শুভেন্দু কীভাবে বিজেপির মতো একটি ‘সাম্প্রদায়িক’ দলের সঙ্গে হাত মেলাবেন সেই প্রশ্ন তুলেও তাঁকে বিঁধেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ নিয়ে আবার শুভেন্দু অনুগামীদের পাল্টা কটাক্ষ, আরএসএস ও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হওয়া তৃণমূল নেত্রী নিজেই তো ‘৯৮ সালে তো তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। এখন শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে কেন? শুভেন্দুর নিজের মুখে তাঁর বিজেপি যোগদান প্রসঙ্গে কী বার্তা উঠে আসে সেদিকেও নজর রয়েছে। তাছাড়া মোদী ও শাহ-সহ বিজেপিকে যখন বহিরগত বলে বারবার আক্রমণ করছে তৃণমূল, তখন শুভেন্দুর বার্তা ছিল, ‘আগে আমরা ভারতবাসী পরে বাঙালি।’ হলদিয়ার এক সভা থেকে তিনি বলেছিলেন, বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলান নেহরু সমীহ করতেন। সতীশ সামন্ত কোনওদিন নেহরুকে বহিরাগত বলেননি আর নেহরুও তাঁকে অ-হিন্দিভাষী মনে করতেন না।
রাজ্যের আইনের শাসন নিয়েও শুভেন্দুর মুখে রাজ্যের শাসক দলের বিরোধী মন্তব্য উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে তিনি তোপ দেগে বলেছিলেন ‘বাংলায় বাই দ্য পার্টি, অফ দ্য পার্টি’ ব্যবস্থা চলছে। তাঁকে ও তাঁর অনুগামীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে রাজ্য পুলিশ, এমন অভিযোগ তুলে আবার রাজ্যপালের কাছে আবেদনও করেছেন তিনি। তাই শনিবারের মঞ্চ থেকে তৃণমূল জমানায় আইনের শাসন নিয়েও মুখ খুলতে পারেন শুভেন্দু। সবমিলিয়ে অমিতের সভায় শুভেন্দুর উপস্থিতি নিয়ে তীব্র হচ্ছে জল্পনা।
Comments are closed.