প্রায় সাত মাস ধরে হাতের ছোঁয়ায় জামদানির উপর ফুটিয়ে তুলেছিলেন ময়ূরের রঙিন নকশা। সেই জাতীয় পাখিই তাঁতশিল্পী সরস্বতী সরকারকে এনে দিল জাতীয় পুরস্কার।
শুক্রবার ছিল জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবস। কেন্দ্রীয় সরকারের বস্ত্রবয়ন দফতরের তরফে এ বছর জাতীয় পুরস্কার তুলে দেওয়া হল নদিয়ার রানাঘাটের সরস্বতী সরকারের হাতে।
তাঁতশিল্পীর পরিবারে জন্ম এবং তাঁতের কাজে হাতেখড়ি বাবা রামপদ বিশ্বাসের কাছে হলেও বছর ৩৫ আগে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার তাগিদে প্রায় বাধ্য হয়েই তাঁত বোনাকে পেশা করেছিলেন সরস্বতী দেবী। তারপর আর তাঁতের পালাগর্ত থেকে পা তুলতে পারেননি। প্রায় ৩৫ বছর ধরে তিনি এবং তাঁর স্বামী রঞ্জিত সরকার শাড়ি বোনার কাজ করে চলেছেন। তবে শুধু রোজগার করাই নয়, ভালো কাজ শেখার উৎসাহ ছিল বরাবরের। সেই সূত্রেই জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শান্তিপুরের স্বনামধন্য তাঁতশিল্পী বীরেন বসাকের কাছে জামদানি শাড়ি বোনার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সরস্বতী দেবী। তাঁর শিল্প নৈপুণ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে বীরেন বাবুর। স্বামীর সাহায্য নিয়ে প্রায় সাত মাস ধরে সিল্কের জামদানি শাড়ির পাড়ে এঁকেছেন ময়ূর। ফুটিয়ে তুলেছেন লতাপাতার ছবি। শিল্পী বীরেন বসাকের চেষ্টাতেই তাঁর এই অসাধারণ শিল্পকর্ম দিল্লি পৌঁছয়।
সপ্তাহখানেক আগে দিল্লি থেকে ফোন আসে। জানানো হয় এবারের জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন সরস্বতী সরকার। গত শুক্রবার জাতীয় তাঁত দিবসে দিল্লিতে এই পুরস্কার পেতে পারতেন সরস্বতী দেবী। কিন্তু করোনা আবহে অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে। তাই সরকারি প্রতিনিধির মাধ্যমে পুরস্কার ও শংসাপত্র এসে পৌঁছেছে। সরস্বতী দেবী বলেন, আমাকে সম্মান জানানোর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। এই পুরস্কার বাংলার তাঁত শিল্পের মর্যাদা বৃদ্ধি করল। বীরেনবাবুর আশীর্বাদে আমি এই কাজ করতে পেরেছি। আমিই সম্ভবত রাজ্যের প্রথম মহিলা তাঁতশিল্পী যে এই সম্মান পেলাম। এটা আমার কাছে ঈশ্বরপ্রাপ্তির সমান। আমি এই পুরস্কার পাওয়ায় আমার গ্রামের মেয়েরাও এবার নতুন করে তাঁত শিল্পের দিকে ঝুঁকবে। এটাই বড় প্রাপ্তি। সরকারের কাছে তাঁর আবেদন, এই ক্ষুদ্র শিল্পকে রুগ্নপ্রায় অবস্থা থেকে আবার গতিশীল করে তোলার প্রয়াস নেওয়া হোক।
নাম সরস্বতী হলেও প্রবল দারিদ্রের কারণে চতুর্থ শ্রেণিতেই সাঙ্গ হয়েছিল তাঁর পড়াশোনার পাঠ। স্বামীরও বিশেষ পড়াশোনা নেই। কিন্তু দু’জনের আঙুলেই ছিল শিল্পীর জাদু। তা দিয়েই গত ৩৫ বছর ধরে শিল্প সৃষ্টি করে চলেছেন এই দম্পতি।
এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে অবশ্য সজাগ সরস্বতী দেবী। তাই কাজের মধ্যেও সকাল সন্ধ্যা নিয়ম করে ছেলে মেয়েদের পড়তে বসাতেন। স্বপ্ন দেখছেন ছেলে সেনার কাজে যোগদান করে দেশসেবা করবে। আর মেয়ে হবে শিক্ষিকা।
Comments are closed.