রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচনে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট কি কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রেখেছে বিজেপি শিবিরকে? সরাসরি কিছু না বললেও, এই ইস্যুতে ট্যুইট করে কংগ্রেস সমর্থকদের পুরনো সিপিএমের কথা মনে করিয়ে দিলেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি এবং মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়।
ছ’মাস আগে হওয়া লোকসভা ভোটের ফলাফল এবং রাজ্যের বর্তমান পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কালিয়াগঞ্জ, খড়্গপুর এবং করিমপুর কেন্দ্রে লড়াই সরাসরি বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের। লোকসভা ভোটের নিরিখে কালিয়াগঞ্জ এবং খড়্গপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রচুর ভোটে এগিয়ে রয়েছে। করিমপুরে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
কিন্তু লোকসভা ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেস এই তিন কেন্দ্রেই জোট করে লড়ছে এবং জোরকদমে চলছে যৌথ প্রচার। কালিয়াগঞ্জ এবং খড়্গপুরে দীর্ঘদিন কংগ্রেস জিতে আসায় এই জোট যদি তাৎপর্যপূর্ণ ভোট কাটতে পারে তবে দুই কেন্দ্রেই বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ফারাক অনেকটাই কমবে। যার জেরে কালিয়াগঞ্জ এবং খড়্গপুরে তৃণমূল-বিজেপি লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর সেই কারণেই সিপিএম-কংগ্রেস জোট নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তিত গেরুয়া শিবির। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম-কংগ্রেস নয়, তাঁরাই যে প্রধান বিরোধী শক্তি তাও রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রচারে তুলে ধরছেন। কারণ, বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোট ভাগ হলে আখেরে তৃণমূলেরই লাভ। আর রাজ্য বিজেপির এই চিন্তায় শরিক হয়ে তথাগত রায় রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ইস্যুতে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে মন্তব্য করে কংগ্রেসকে স্মরণ করিয়ে দিলেন অতীতে তাদের প্রতি সিপিএমের আচরণ।
২৫ শে নভেম্বরের উপনির্বাচনে এই জোট ইস্যুতে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি এবং বর্তমানে মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ের প্রবেশ সম্প্রতি করিমপুরে সিপিএম-কংগ্রেসের যৌথ নির্বাচনী প্রচারকে সামনে রেখে। কিছুদিন আগেই করিমপুরে একই মঞ্চে নির্বাচনী জনসভা করেন করেন কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী এবং সিপিএম নেতৃত্ব। সেই মিটিংয়ের একটি ছবি, যেখানে দেখা যাচ্ছে লাল পতাকায় মোড়া মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন অধীর চৌধুরী, তা তুলে ধরে রবিবার ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার আইটি সেলের কনভেনার এবং বিজেপি নেতা অভিজিৎ বসাক একটি ট্যুইট করেন। সেখানে কংগ্রেস এবং অধীর চৌধুরীকে কটাক্ষ করে তিনি উল্লেখ করেন ২১ শে জুলাইয়ের ঘটনা। বাম সরকারের চালানো গুলিতে ১২ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছিল, একথা লিখে সিপিএমের মঞ্চে মিটিং করার জন্য প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরীকে কটাক্ষ করেন তিনি।
সোমবারই অভিজিৎ বসাকের এই ট্যুইটকে শেয়ার করে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়। বাম জমানায় সিপিএমের হাতে কংগ্রেসিদের আক্রান্ত এবং খুন হওয়ার দুটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি কার্যত খোঁচা দেন অধীর চৌধুরীকে। হাওড়ার আমতা এবং সাঁইবাড়ির ঘটনার উল্লেখ করে তথাগত রায় ট্যুইটে সরাসরি কিছু না বললেও, তাঁর কটাক্ষের নিশানা যে সিপিএম-কংগ্রেস জোট তা স্পষ্ট।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সিপিএম-কংগ্রেসের জোট ভেস্তে যাওয়া যে বিজেপিকে বাড়তি সুবিধে দিয়েছে তা ভোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বুঝতে পেরেছেন দুই দলেরই রাজ্য নেতৃত্ব। এবার বিধাসভা উপনির্বাচনে প্রথম থেকেই তাই জোট গড়তে মরিয়া ছিল দুই দল। এবার সেই জোট ইস্যুতেই কংগ্রেস কর্মী, সমর্থকদের সিপিএমের অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিলেন তথাগত রায়।
Comments are closed.