২ বাঙালি সহ ৩ বিভাগীয় সম্পাদককে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে SHILLONG TIMES এ কাজ বন্ধ করলেন স্থানীয় কর্মীরা, বিরল দৃষ্টান্ত করোনাকালে
অতিমারি একা আসেনি। সঙ্গে এনেছে এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক বিপর্যয়। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে, মার্চ থেকে চলা বিশ্বের দীর্ঘতম এবং কঠোরতম লকডাউনে এদেশে কাজ খুইয়েছেন ২ কোটি চাকুরিজীবী। ছাঁটাইয়ের এই মহাযজ্ঞে এবার অতিমারি দেখালো, পুরনো সমস্ত হিসেব উল্টেপাল্টে দিয়ে ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর স্পর্ধা। ভারতের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে রচিত হল দৃষ্টান্তের নয়া অধ্যায়।
জায়গার নাম শিলং। শেষের কবিতা বাদ রেখে সাম্প্রতিক ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে বহিরাগত বিশেষ করে বাঙালিদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভের ইতিবৃত্ত। কিন্তু অতিমারি যেন সবেতেই আলাদা। মেঘালয়ের প্রাচীনতম সংবাদপত্র SHILLONG TIMES এ দুই বাঙালি বিভাগীয় সম্পাদক সহ ৩ জনকে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কলম নামিয়ে রাখলেন তাঁদের সহকর্মীরা। ঘটনাচক্রে প্রতিবাদী সংবাদকর্মীরা প্রত্যেকেই মেঘালয়ের ভূমিপুত্র।
মেঘালয় তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাচীনতম দৈনিক সংবাদপত্র শিলং টাইমস। গত ৭৫ বছর ধরে উত্তর-পূর্বে খবরের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সংস্থা। সম্প্রতি সেই সংস্থায় করোনা বিধিনিষেধ নিয়ে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বিরোধ বাধে কর্মীদের। এক কর্মীর করোনা ধরা পড়ায় অফিসকে কনটেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করে সিল করে দেয় প্রশাসন। এর জেরে অগাস্টে বেশ কিছু দিন বন্ধও ছিল কাগজ। তারপর অফিস খুলেছে। কিন্তু অভিযোগ, কর্মীদের মধ্যে ফিজিক্যাল ডিসট্যান্সিং এবং অন্যান্য সুরক্ষাবিধি মানার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। সংক্রমিত হচ্ছেন কর্মীরা।
গত শনিবার কোয়ারেন্টিন থেকে ফিরে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শিলং টাইমসের এক্সিকিউটিভ এডিটর দীপঙ্কর রায়, নিউজ এডিটর তথা সংস্থার অন্যতম পুরনো কর্মী ই এম জোসে এবং ফিচার্স এডিটর নবমিতা মিত্র। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, ৭ সেপ্টেম্বর, সোমবার তাঁদের ৩ জনকে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। ছাঁটাইয়ের চিঠিতে দেখা যায় তাঁদের চাকরি গিয়েছে ১ সেপ্টেম্বর থেকেই। কিন্তু কারণ কী?
এখানেই লুকিয়ে রহস্য। ছাঁটাইয়ের চিঠিতে লেখা রয়েছে কোভিড ১৯ উদ্ভুত পরিস্থিতির কথা। কিন্তু তার অর্থ কী? উত্তর দেয়নি কর্তৃপক্ষ। সহকর্মীদের অন্যায়ভাবে ছাঁটাইয়ের বিরোধিতা করেন সহকর্মীরা। কর্তৃপক্ষ কোনও কথা শুনতে রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে ছাঁটায়ের প্রতিবাদে সহকর্মীরা হরতালের সিদ্ধান্ত নেন। ৯ সেপ্টেম্বর, বুধবার থেকে অফিসের ১১ জন কর্মী মিলে দীপঙ্কর রায়, ই এম জোসে এবং নবমিতা মিত্রকে ফেরানোর দাবিতে কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁরা কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সেদিনই। লিখেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ জনকে বিনা শর্তে কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং করোনা প্রতিরোধে সমস্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জানিয়েছিলেন, অন্যায় ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে এদিন তাঁদের প্রতীকি হরতাল। উত্তর আসেনি সেই চিঠির। তারপরই লাগাতার হরতালের সিদ্ধান্ত নেন দীপঙ্কর-নবমিতার সহকর্মীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতিবাদী কর্মীরা প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, যতদিন কর্তৃপক্ষ ওই ৩ জনকে কাজে ফিরিয়ে নেবেন না এবং কোভিড সতর্কতা পালনের অঙ্গিকার করবেন না, কাজে ফিরবেন না তাঁরা।
শিলং টাইমসের কর্মী কিনসাই সাংগ্রিয়াং, রোনাল্ড সিয়েম, কসমাস সাংমাদের সাফ কথা, এভাবে বিনা নোটিসে ছাঁটাই করা বেআইনি শুধু নয়, অতিমারি পরিস্থিতিতে নিকৃষ্টতম কাজ। কর্তৃপক্ষকে ভুল স্বীকার করে দীপঙ্কর-জোসে-নবমিতাকে কাজে ফেরাতেই হবে।
শেষ পর্যন্ত চাকরি ফিরে পাবেন কি ওঁরা? উত্তর অজানা, কিন্তু যে মেঘালয়ে নতুন করে বাঙালি খেদাও অক্সিজেন পাচ্ছে বলে ভয় পাচ্ছিলেন অনেকেই, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত সেই জায়গাতেই দুই বাঙালি সহকর্মীর ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কলম নামিয়ে রাখার দুঃসাহস দেখালেন ১১ জন ভূমিপুত্র। অতিমারি পরিস্থিতি তো বটেই, সামগ্রিকভাবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যে উদাহরণ বিরলতম।
Comments are closed.