দেউলিয়া ঘোষণা করে ব্যবসা বন্ধ করে দিল পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্রাভেল ফার্ম থমাস কুক। ভারত তো বটেই, সারা দুনিয়ায় পর্যটন ব্যবসা কার্যত নিয়ন্ত্রণ করত ব্রিটিশ সংস্থা থমাস কুক। কিন্তু ক্রমাগত বেড়ে চলা দেনা, শেষ পর্যন্ত ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য করল থমাস কুককে। রবিবার মাঝ রাত নাগাদ ব্রিটিশ সংস্থাটি ব্যবসা বন্ধের কথা ঘোষণা করে। বিশ্বের বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে থাকা থমাস কুকের গ্রাহকদের ইংল্যান্ডে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে সেদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি। সূত্রের খবর, আগামী ২ সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় লক্ষ ব্রিটিশকে দেশে ফেরানো হবে।
প্রাচীন থমাস কুক বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই শেষ হয়ে গেল একটি অধ্যায়। বাংলা হোক কিংবা ইউরোপ বা আমেরিকা। দু’দুটি বিশ্বযুদ্ধ দেখে ফেলা থমাস কুক, দুনিয়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে নিতে পেরেছিল। কিন্তু ২০০০ পরবর্তী জেট গতিতে বদলে চলা দুনিয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ঝাঁপ বন্ধ করতে হল ১৮৪১ সালে যাত্রা শুরু করা লন্ডনের থমাস কুককে।
একেবারে শুরুতে স্কুলের এক্সকার্শনের জন্য ট্রেনের কামরা ভাড়া করে ছাত্রছাত্রীদের ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেত থমাস কুক। ক্রমেই থমাস কুক ডানা মেলে সারা দুনিয়ায়। বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত থমাস কুকের হাতে ছিল পুরোদস্তুর একটি এয়ারলাইন্স, পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে একাধিক হোটেল, রিসর্ট। বছরে ১৯ মিলিয়ন মানুষকে পর্যটন পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে থমাস কুক।
সমস্যার সূত্রপাত, সংস্থার ক্রমাগত বেড়ে চলা ঋণের বোঝা নিয়ে। সূত্রের খবর, থমাস কুকের উপর ১.৭ বিলিয়ন পাউন্ডের দেনা ছিল। এই পর্বতপ্রমাণ দেনা শোধ করার কোনও উপায় সংস্থা বের করতে পারেনি। এই সময় বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থ সাহায্য চেয়েও পায়নি তারা। এর অবশ্যম্ভাবী ফল, পৃথিবীর প্রাচীনতম প্যাকেজ ট্যুর সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হওয়া। তবে কেবলমাত্র ঋণের বোঝাই নয়, পর্যটন মানচিত্রের ক্রমাগত বদলের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারা এবং অনলাইনের রমরমা, থমাস কুক বন্ধের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, গতবছর ইউরোপের আগুনে গরমের (হিট ওয়েভ) কারণে থমাস কুকের একের পর এক প্যাকেজ ট্যুর শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়। যেখানে শীতের আমেজ গায়ে মেখে ছুটি কাটাতে যায় গোটা দুনিয়া, সেই স্পেন বা তুরস্কে প্রবল গরমের প্রভাব এসে পড়েছে থমাস কুকের ভাঁড়ারে। ঋণের দায়ে জর্জরিত থমাস কুক গত গ্রীষ্মের গরমের আঁচ সামলাতে পারলে, আজ এই দিন দেখতে হত না বলে মনে করছেন ইউরোপ-আমেরিকার পর্যটন এবং বাজার বিশেষজ্ঞরা।
সংস্থা বন্ধ হওয়া নিয়ে থমাস কুকের চিফ এক্সিকিউটিভ পিটার ফানখাউজর বলেন, ঋণদাতাদের কাছ থেকে কোনওরকম রক্ষাকবচ না পেয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। এই ঘটনা গভীর লজ্জার।
সূত্রের খবর, শেষ মুহূর্তে দায় মিটিয়ে ফের থমাস কুক খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঋণদাতাদের অনাগ্রহে তা বাস্তবায়িত হয়নি। থমাস কুক চলে গেল ইতিহাসের পাতায়। শেষ হল বিশ্ব পর্যটনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
Comments are closed.